ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান: অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এমন একটি রোগ, যা হাড়ের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে রক্ত সরবরাহ বন্ধের ফলে হয়। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে হাড়ের টিস্যু মারা যায় এবং হাড় ভেঙে যায়। যখন কোনো জয়েন্ট, যেমন– হিপ জয়েন্টের কাছাকাছি হয়, তখন জয়েন্টের পৃষ্ঠটি ভেঙে যেতে পারে। এ অবস্থা যে কোনো হাড়ে হতে পারে। এটি সাধারণত লম্বা হাড়ের শেষ মাথায় হয়। সাধারণত একটি হাড় একই সময়ে অনেক হাড় অথবা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাড়কে ক্ষয় করে।
কোথায় কোথায় নেক্রোসিস হতে পারে গোড়ালি, চোয়াল, হাঁটু, হাতের হিউমেরাস ও কাঁধের জয়েন্ট, পায়ের ফিমার ও হিপ জয়েন্টে।
অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের কারণ
কোনো কারণে জয়েন্টে আঘাত পেলে; জয়েন্ট ভেঙে গেলে; রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে; দীর্ঘদিন ধরে কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ সেবন করলে; অতিরিক্ত মদ্যপান করলে; দীর্ঘদিন ধরে কোনো রোগে আক্রান্ত হলে, যেমন– ডায়াবেটিস; রক্তে কোনো রোগ থাকলে, যেমন– সিকেল সেল অ্যানিমিয়া লিউকেমিয়া; রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি কারণে; এইচআইভি/এইডস রোগের জন্য; অটো ইমিউন রোগের জন্য; হাইপার লিপিডেমিয়ার কারণে; হাইপার কোয়াগুলেবেল অবস্থায় থাকলে; প্যানক্রিয়াটাইটিস; গাউচার রোগ; সিস্টেমেটিক লুপাস ইরাইথিম্যাটাস রোগ থাকলে; কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করলে, জয়েন্ট ডিসলোকেশন হলে।
রোগের লক্ষণ
হাঁটাচলা করার সময় ব্যথা লাগা, পায়ে টান লাগা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় ব্যথা অনুভব করা, দাঁড়ানোর সময় ব্যথা অনুভব করা, হাঁটু ভেঙে বসতে না পারা, আক্রান্ত অঙ্গ ছোট হয়ে যাওয়া, কুঁচকিতে-ঊরুতে-নিতম্বে ব্যথা হওয়া, বিশ্রাম নেওয়ার সময় ব্যথা অনুভব হওয়া, ক্রস পায়ে বসতে না পারা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যান, হাড়ের স্ক্যান, বায়োপসি, হাড়ের কার্যকারিতা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন– বয়স, রোগের পর্যায়, হাড়ের ক্ষতির পরিমাণ।
নন-সার্জিক্যাল চিকিৎসা
আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা বা গরম সেঁক, কিছু ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ওষুধ, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং কার্যকর বিশ্রাম।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা
কোর ডি কম্প্রেশন, হাড় গ্রাফটিং, অস্টিওটমি, সম্পূর্ণ হিপ জয়েন্ট প্রতিস্থাপন।
জটিলতা
চিকিৎসা করা না হলে এই রোগ ধীরে ধীরে খারাপ রূপ ধারণ করে। অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ফলে হাড়ের মসৃণ আকৃতি নষ্ট হয়। ফলে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। ব্যথা বা অন্য কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : ফিজিওথেরাপি, ডিজঅ্যাবিলিটিজ ও রিহ্যাবিলিটেশন স্পেশালিস্ট এবং সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালট্যান্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।