চীনের বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী নতুন হাড় জোড়া লাগানোর আঠা তৈরি করেছেন, যা প্রথাগতভাবে মাসখানেক সময় নেয় এমন ফ্র্যাকচার বা ভাঙা হাড়কে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সারিয়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বোন-০২ নামক এই পণ্যটি একটি চীনা গবেষক দল তৈরি করেছে। গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, তারা এমন অর্থোপেডিক আঘাত সারানোর উপায় খুঁজছিলেন, যার জন্য সাধারণত কয়েক মাস সময় এবং মেটাল প্লেট বসানোসহ আক্রমণাত্মক সার্জারির প্রয়োজন হয়।
হাংঝৌয়ের স্যার রান রান শ হসপিটালের সহযোগী প্রধান অর্থোপেডিক সার্জন লিন জিয়ানফেং বলেছেন, রক্তে ভরা পরিবেশেও এই আঠা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে নিখুঁতভাবে হাড়কে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করতে পারে।
চো সান ডেইলি জানিয়েছে, একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কব্জি ভাঙা একজন রোগীকে মাত্র তিন সেন্টিমিটার ছিদ্রের মাধ্যমে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে তার ভাঙা হাড় জোড়া লেগে যায়।
তারা আরো জানায়, কব্জি ঠিক করার জন্য যদি সার্জারি করা হতো, তবে তাতে একটি ধাতব প্লেট এবং স্ক্রু লাগত, যা পরের বছর আবার অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করার প্রয়োজন হতো।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তিন মাস ফলো-আপ চেকআপের পর, রোগীর ভাঙা হাড় কোনো জটিলতা ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠেছে।
ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং জানিয়েছে, গবেষকরা এই আঠার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ঝিনুক থেকে। ঝিনুক সেইসব জলজ পৃষ্ঠতলের সঙ্গেও লেগে থাকতে পারে, যা প্রথাগত আঠার পক্ষে সামলানো কঠিন।
তারা ব্যাখ্যা করেছে, ঝিনুক দ্বারা নিঃসৃত এই বায়ো-গ্লু সাধারণ আঠার মতো নয়। এটি আর্দ্র, লবণাক্ত, ভেজা এবং ক্রমাগত গতিশীল পরিস্থিতিতেও চাপ ও ক্ষয় প্রতিরোধী বন্ধন তৈরি করে।
গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, বোন-০২ এর উদ্ভাবকরা আরো বলেছেন, পদার্থটি ৪০০ পাউন্ডের (প্রায় ১৮১ কেজি) বেশি সর্বোচ্চ বন্ধন শক্তি প্রদর্শন করেছে।
এর নির্মাতারা জানিয়েছেন, বোন-০২ হাড় সেরে উঠলে শরীরের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মিশে যেতে পারে। ফলে শরীরে বসানো ইমপ্ল্যান্ট অপসারণের জন্য দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো আরো ইঙ্গিত দেয়, মেটাল প্লেট ব্যবহারের চেয়ে এই হাড়ের আঠা ব্যবহারে সংক্রমণ কম হয়।