গর্ভবস্থায় ডায়াবেটিস : গর্ভবস্থায় রোগীরা দুভাবে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে পারে। ১. গর্ভধারণের আগে থেকেই তার ডায়াবেটিস আছে অথবা ২. গর্ভাবস্থায় নতুন করে প্রথম তার ডায়াবেটিস হয়েছে, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। বেশির ভাগেরই প্রেগনেন্সি বা গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস রোগ থাকে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : গর্ভকালীন সময়ে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক এর বেশি থাকে।
যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ : পরিবারের সদস্য (মা-বাবা, ভাইবোন, চাচা, মামা, খালা, ফুপু, দাদা, দাদি) আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
আগের গর্ভকালীন ইতিহাস : অতিরিক্ত ওজনের সন্তান প্রসব (৪ কেজির বেশি)। মৃত শিশু প্রসব। সন্তান হওয়ার পরে মারা যাওয়া। আগের প্রেগনেন্সিতে ডায়াবেটিস ছিল। বর্তমান গর্ভবস্থায় পেটে বেশি পানি থাকা। বারবার অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া ও মাসিকের রাস্তায় চুলকানো। বয়স ৩০ বছরের বেশি। অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয় : প্রত্যেক গর্ভবতী নারী গর্ভবস্থা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করবেন। যারা ঝুঁকিতে আছেন, তারা অবশ্যই RBS, Oral Glucose Tolerance Test (OGTT) টেস্ট করিয়ে নেবেন।
চিকিৎসা : পুষ্টিবিদ প্রদত্ত খাদ্যতালিকা, সীমিত পরিমাণ ব্যায়াম (হাঁটা) করতে হবে। ইনসুলিন এ রোগের একমাত্র নিরাপদ ওষুধ। শুধু ২৫ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন লাগে। যেসব রোগীর ইনসুলিন লাগবে, তারা অবশ্যই নিজে মেশিন কিনে ডায়াবেটিস বাসায় মাপা শিখবেন এবং নিজে নিজে ইনসুলিন নেওয়া শিখে নেবেন।
ডেলিভারি : যাদের ইনসুলিন লাগে না, তারা সাধারণ রোগীর মতো স্বাভাবিক (৩৯ সপ্তাহ) সময় প্রসব করাবেন। ব্যথা উঠলে প্রসব করাবেন। কিন্তু যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তারা অব্যশই ৩৮ সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে প্রসব করাবেন।
ফলোআপ : প্রসবের ১/২ মাস পর OGTT করাতে হবে। ৫০ শতাংশ রোগীর স্থায়ীভাবে ডায়াবেটিস রয়েই যায় এবং ৫০ শতাংশ রোগীর পরবর্তী প্রেগনেন্সির সময় হতে পারে।
শেষ কথা, মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে দিনে ৩-৪ বার রক্তে গ্লুকোজ মাপুন (সকালের খালি পেটে ও খাবারের ১-২ ঘণ্টা পরে)। রেকর্ড সংরক্ষণ করুন ও প্রতিবার চেকআপে নিয়ে যান। খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখুন (ডায়েট প্ল্যান)। ৫-৬ ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট করে খাবার খান। চিনি, মিষ্টি, সফট ড্রিংকস, কেক, মিষ্টান্নের পরিবর্তে লো-জিআই ((low glycemic index) খাবার, যেমন- ব্রাউন রাইস, ওটস, সবজি, ডাল, বাদাম, ফল (কম চিনিযুক্ত)। প্রচুর পানি পান করুন।
লেখক : স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল
চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
হটলাইন: ১০৬৭২