ডা. মোহাম্মদ তারিকুল আলম: এমন অনেকেই আছেন, ঘুমের ঘোরে রুমের বাইরে চলে যান, নিজের মনে কথা বলেন, কাঁদেন, আবার ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তাঁর কিছুই মনে থাকে না– কী করেছেন বা কোথায় গেছেন। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ অবস্থাকে বলা হয় সমনাবুলিজম বা ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা, ইংরেজিতে স্লিপ ওয়াকিং। সাধারণত ছোটদের মধ্যে দেখা গেলেও বড়রা আক্রান্ত হতে পারেন স্লিপ ওয়াকিংয়ে।
যারা স্লিপ ওয়াকিং করে থাকেন, তারা আর সবার মতো ঘুমাতে যান বিছানায়, ঘুমিয়ে পড়েন ঠিকমতো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় আসল খেলা। তারা কথা বলা শুরু করেন আপন মনে, হয়তো কাঁদেন বা চিৎকার করেন, উঠে পড়েন ঘুম থেকে। চোখ খুলে তাকান; কিন্তু চেহারা থাকে ভাবলেশহীন, অভিব্যক্তিহীন। তিনি কী করছেন, কী বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন– সব করছেন নিজের অজান্তে।
স্লিপ ওয়াকিংয়ের কারণ
খুব ক্লান্ত দেহে বিছানায় গেলে, সারাদিন অধিক খাটাখাটুনি হলে;
উত্তেজনা, ভয়, মানসিক অস্থিরতা থাকলে;
প্রতিদিনের ঘুম যদি হয় অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত;
স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে বিশেষ ধরনের শ্বাসবদ্ধতা থাকলে;
কিছু ওষুধের কারণেও ঘটতে পারে এমন ব্যাপার;
মা-বাবার থেকে থাকলে সন্তানেরও স্লিপ ওয়াকিং করার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
স্লিপ ওয়াকিং থামাতে করণীয়
প্রথমেই হতে হবে সতর্ক, একা থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না তাদের। অনেকে দরজা খুলে বাইরে চলে যান, রেলিং টপকে পড়ে যান নিচে অথবা রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হন। হাঁটতে দেখলে তাদের বিছানায় নিয়ে যান, আবার শুইয়ে দিন মমতা মিশিয়ে। কিছু ওষুধ খেলে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে। এসব ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া একটা শ্বাসবদ্ধতার সমস্যা, যা ঘুমের মধ্যে হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করলে অনেকের স্লিপ ওয়াকিং সমস্যার সমাধান হয় বলে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।
কোনো ধরনের ধারালো বস্তু, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি ঘরে রাখা যাবে না। বাচ্চাদের মা-বাবার একটা ডায়েরি করতে পারেন, প্রতিদিন বাচ্চা কখন ঘুমাতে যাচ্ছে এবং কখন তার সমস্যা শুরু হচ্ছে, সেটি লিপিবদ্ধ শুরু করুন।
স্লিপ ওয়াকিং নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি গুরুতর কোনো মানসিক সমস্যা নয়। শুধু সচেতনতা ও যত্নবান হলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক