English

27 C
Dhaka
শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
- Advertisement -

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা ও করণীয়

- Advertisements -
ডা. এম ইয়াছিন আলী: দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা এবং এ সম্পর্কিত করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। বিশেষ করে শীতের সময় ঘাড়, কোমর, হাঁটু এবং কাঁধের জয়েন্টের ব্যথা অধিক তীব্র হয়ে ওঠে এবং দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে। এমন ব্যথার পেছনে নানা ধরনের কারণ থাকে। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে বয়সজনিত ক্ষয় বা ডিজেনারেটিভ রোগগুলো এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস, লাম্বার স্পনডাইলোসিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগের মূল কারণ হলো হাড়, জয়েন্ট ও ডিস্কের ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া, যা এক সময় চলাচল, নড়াচড়া এমনকি সাধারণ কাজও কঠিন করে তোলে।

স্পনডাইলোসিস হলো, মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলোর ক্ষয়জনিত একটি সমস্যা, যেখানে কশেরুকাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রান্তে অস্টিওফাইট নামে ছোট ছোট হাড়ের বৃদ্ধি দেখা দেয়। এ রোগে দুই কশেরুকার মাঝের ডিস্ক স্পেস সংকুচিত হয়ে নার্ভ রুটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগী নার্ভের পথ ধরে ব্যথা, অবশভাব, ঝিনঝিন অনুভূতি কিংবা দুর্বলতার মতো বিভিন্ন উপসর্গ অনুভব করেন। ঘাড়ের অংশে এ সমস্যা হলে সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এবং কোমরের অংশে হলে বলা হয় লাম্বার স্পনডাইলোসিস। দীর্ঘদিন এ রোগ অবহেলা করলে হাত-পা অবশ হয়ে আসা, ভারসাম্যহীনতা বা হাঁটার সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

Advertisements

অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো, জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ গঠনের ধীরে ধীরে ক্ষয়জনিত দীর্ঘমেয়াদী একটি রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্টিলেজ পাতলা হয়ে যায়, জয়েন্টের ভেতরে থাকা সাইনোভিয়াল তরল কমে আসে এবং জয়েন্ট সারফেস খসখসে হয়ে পড়ে। তখন জয়ন্টের অভ্যন্তরীণ স্পেস সংকুচিত হয় এবং হাঁটাচলা বা নড়াচড়ার সময় মারাত্মক ব্যথার সৃষ্টি হয়। হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে রোগীর বসা, দাঁড়ানো, সিঁড়ি ভাঙা, নিচু হয়ে বসা বা নামাজ পড়ার মতো কাজগুলো অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির একটি রোগ। এটি একটি অটো-ইমিউন ডিজিজ, অর্থাৎ দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের জয়েন্টের ওপরই অস্বাভাবিক আক্রমণ চালায়। এ রোগে সাধারণত হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলো বেশি আক্রান্ত হয়। জয়েন্টগুলো ফুলে ওঠে, গরম লাগে এবং ব্যথা তীব্র হয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর জয়েন্টে অসহ্য ব্যথা ও কাঠিন্য থাকে, যা কিছুক্ষণ হাঁটাচলা বা হাত-পা নাড়াচাড়া করার পর ধীরে ধীরে কমে আসে। যথাযথ চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘদিন এ রোগ থাকলে জয়ন্টের গঠন বদলে গিয়ে স্থায়ী বিকৃতি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আছে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পনডাইলাইটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী বাতরোগ। এসব রোগে চিকিৎসা না নিলে মেরুদণ্ড স্থায়ীভাবে শক্ত হয়ে গিয়ে শরীরের স্বাভাবিক আকৃতি পরিবর্তন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

দীর্ঘমেয়াদী রোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। চিকিৎসায় ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখা এবং রোগের অগ্রগতি ধীরগতি করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপি এক্ষেত্রে নিরাপদ, কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। স্পন্ডাইলোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পনডাইলাইটিসে ফিজিওথেরাপি গ্রহণ প্রয়োজন। যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা যায় এবং ভবিষ্যতের জটিলতাও এড়ানো সম্ভব হয়।

Advertisements

লেখক : বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/ugn4
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন