English

26.1 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ১৪, ২০২৫
- Advertisement -

মানুষের রোগ নির্ণয়ে ভেড়ার রক্তের ব্যবহার বাড়ছে

- Advertisements -

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানবদেহের রোগ নির্ণয়ে নানা ধরনের উন্নত প্রযুক্তি ও উপাদান ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে সাম্প্রতিককালে মানুষের রোগ নির্ণয়ে ল্যাবগুলোতে ভেড়ার রক্তের ব্যবহার বাড়ছে। অনেকের কাছে বিষয়টি নতুন মনে হলেও ব্যাক্টেরিয়া, মাইক্রো অর্গানিজম বা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের রোগ শনাক্তকরণে এ পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবারেটরিতে ভেড়ার খামার গড়ে তোলে সেই প্রাণীর রক্ত দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে চলছে রোগ নির্ণয়। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও রয়েছে এমনই এক ভেড়ার খামার। খামার দেখভালের জন্য সরকারি কর্মচারি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও পশু চিকিৎসকেরা নিয়োজিত রয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের রক্তের বেশ কয়েকটি প্রকারের সঙ্গে ভেড়া ও ঘোড়ার রক্তের মিল রয়েছে। তাছাড়া ভেড়া গৃহপালিত প্রাণী হওয়ায় পোষাও সহজ। এ কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ল্যাবগুলোতে রোগ নির্ণয়ে ভেড়ার রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহার উদ্যোগে এই হাসপাতালেই একটি সুসজ্জিত ভেড়ার খামার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাণীগুলোর রক্ত নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে স্থাপিত খামারে গত ২৫ বছর ধরে ভেড়া পালন করা হচ্ছে। টাইলসের তৈরি আধুনিক খামারটিতে বর্তমানে ২০টির মত হৃষ্টপুষ্ট ভেড়া রয়েছে।

এছাড়াও ১৯৬২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এমন এনিমেল হাউজ গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে বর্তমানে ১২টি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়া রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এনিমেল হাউজে ১০টির মত ভেড়া রয়েছে। সাভারের প্রাণিসম্পদ গবেষণা কেন্দ্রে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের ভেড়ার খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা জানান, সাধারণত একজন মানুষ যখন ব্যাক্টেরিয়া, মাইক্রো অর্গানিজম বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যান চিকিৎসক ওই রোগীর রক্তে কোনো ধরনের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া, মাইক্রো-অর্গানিজম বা ভাইরাস আছে সেটি শনাক্ত করতে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। ল্যাব সংশ্লিষ্টরা রোগীর শরীর থেকে নেওয়া রক্তের ব্যাক্টেরিয়াকে জীবিত রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। রক্তে কোন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া আছে এবং কোন রোগের জন্য দায়ী সেটি শনাক্ত করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভষায় মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের এ পরীক্ষাকে বলা হয় ‘কালচার টেস্ট’। এ পরীক্ষায় ভেড়ার রক্ত ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, কালচার টেস্টের মাধ্যমে রোগীর ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন যেমন- টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়াজনিত রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও শরীরে ফোড়া, কাঁটা বা ক্ষত স্থানে ব্যাক্টরিয়া সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসায় এ পরীক্ষা করা করা হয়।

শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, মূলত রোগীর শরীরে কোন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া বাসা বেঁধেছে সেটি চিহ্নিত করতেই কালচার মিডিয়া টেস্ট করা হয়। শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, বেসরকারি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও কেয়ার হাসপাতালসহ অন্তত ১৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এ পরীক্ষা নিয়মিত করে থাকে।

সিএইচআরএফের সিনিয়র রিসার্চ টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ম্যানেজার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রোগীর শরীর থেকে প্রায় সামান্য পরিমাণ রক্ত বা প্রস্রাব, পায়খানা, পুঁজ ইত্যাদি নমুনা নেওয়া হয়। এ নমুনায় বিদ্যমান ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করার জন্য মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের নির্ধারিত কালচার মিডিয়াতে সংমিশ্রণ করা হয়। মূলত এ কালচার মিডিয়া প্রস্তুত করতেই ভেড়া বা ঘোড়ার রক্তের প্রয়োজন হয়। ভেড়ার রক্তে থাকা পুষ্টি উপাদান খেয়ে একটি ব্যাক্টেরিয়া কয়েক কোটি ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম দিতে পারে। তখন কালচার মিডিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াটি শনাক্তকরণ সহজ হয়। সেই ব্যাক্টেরিয়া নির্মূল করতে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে তা জানা যায় এই টেস্টের মাধ্যমে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কী হবে তা-ও নিশ্চত হওয়া যায়।

মোটকথা, একটি ল্যাবে কালচার টেস্টের জন্য প্রতিদিন শতাধিক মানুষের রক্ত ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ব্যাক্টেরিয়া সাধারণত খাদ্য হিসেবে মানুষের রক্তে থাকা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন খেয়ে থাকে। তাই রোগীর স্যাম্পল নেওয়ার পর কালচার মিডিয়া ব্যবহার করে ব্যাক্টেরিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এসময় ল্যাবে কালচার মিডিয়াতে পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি ঘোড়া বা ভেড়ার রক্ত ব্যাক্টেরিয়াকে খেতে দেওয়া হয়।

ডা. সমীর কুমার সাহা আরও জানান, শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে রক্ত, সিএসএফ, ইউরিন (প্রসাব), ফ্লুইড কালচার, বডি ফ্লুইড কালচার, স্টুল কালচার, পাস কালচার,সহ প্রায় ১০০ ধরনের নমুনার কালচার পরীক্ষা করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৬০ থেকে ১৮০টি কালচার পরীক্ষা করা হয়। নমুনা তৈরি করতে ল্যাবে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ কালচার মিডিয়া প্লেট প্রস্তুত করা হয়।

যেসব ল্যাবের নিজস্ব খামার নেই তারা কীভাবে কালচার মিডিয়া প্রস্তুত করেন, জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন বলেন, সরকারি কিছু ল্যাব ছাড়াও ওষুধ কোম্পনিগুলো তাদের মাইক্রোবায়োলোজি ল্যাবে ব্যবহার করার জন্য ভেড়ার রক্ত কিনে আনে। ওষুধ প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে অনুমোদন আছে। দেশে আইসিডিআর,বিতে এনিমেল হাউজ আছে। আমরাও খামার করার চেষ্টা করছি। এখন আইসিসিডিআর,বির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।

দেশে এ ধরনের খামার পরিচালনায় প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া নেই জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষের খামারটি বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের অনুমোদন রয়েছে। শিশু হাসপাতালের খামারটিতে সরকারি অনুমোদন ও প্রতিবছর দুবার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক কিউসি বা কোয়ালিটি কন্ট্রোল টেস্ট করে। বিএসএমএমইউয়ের খামার নিজস্বভাবে চলছে। অন্যদিকে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু ল্যাবে ভেড়ার রক্ত ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান (ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য) সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এসব ল্যাবে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা নজরে রাখতে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের মান যাচাইয়ে প্রত্যেক ল্যাবকে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের (কিউসি) আওতায় আনা উচিত। তাহলে রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সহজ হবে। রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হবেন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/gqwq
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন