ভারতের সংসদে প্রস্তাবিত নতুন তিনটি বিলের কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। প্রস্তাবিত এসব আইনে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ জ্যেষ্ঠ সরকারি সদস্যরা যদি কোনো ‘গুরুতর অপরাধে’ অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার অবস্থায় টানা ৩০ দিন কারাগারে থাকেন, তবে দোষী সাব্যস্ত না হলেও পদ থেকে সরানো যাবে।
বুধবার (২০ আগস্ট) লোকসভায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বিলগুলো উপস্থাপন করেন। এসময় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা কাগজ ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানান। বিলগুলো এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
তবে বিরোধী দল এরই মধ্যে প্রস্তাবগুলোকে ‘অগণতান্ত্রিক’, ‘অসংবিধানিক’ ও ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভোটে হারাতে না পারায় বিজেপি ভুয়া মামলা দিয়ে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের কারাগারে পাঠাবে, টানা এক মাস আটক রাখবে ও জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করবে।
রাহুল গান্ধী বলেন, আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি। তখন রাজা যাকে খুশি সরিয়ে দিতেন। নির্বাচিত প্রতিনিধির কোনো মর্যাদা নেই। মোদীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যদি রাজা আপনার চেহারা পছন্দ না করেন, তবে তিনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) মামলা দিতে বলবেন। আর ৩০ দিনের মধ্যে একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মানুষকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেন ভুলে না যাই কেন নতুন উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হচ্ছে। গত মাসে জগদীপ ধনকড় হঠাৎ পদত্যাগ করেন। যদিও সরকারি ব্যাখ্যায় বলা হয়, তিনি অসুস্থতার কারণে পদ ছাড়েন, কিন্তু এনডিটিভির বরাতে বিরোধী দল দাবি করছে, এ পদত্যাগ বিজেপির চাপের ফল।
রাহুলের দাবি, ধনকড়কে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেদিন উপ-রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলেন, সেদিন কেসি ভেনুগোপাল আমাকে ফোন করে বললেন, ধনকড় চলে গেছেন। এই ঘটনার পেছনে বড় গল্প আছে।
কালো টি-শার্ট পরে সংসদে উপস্থিত হয়ে রাহুল গান্ধী প্রতিবাদের বার্তা দেন। তিনি বলেন, এটি আসলে যারা সংবিধান আক্রমণ করছে, তাদের সঙ্গে যারা সংবিধান রক্ষা করছে তাদের যুদ্ধ।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এবং আইনজীবী ও সংসদ সদস্য অভিষেক মনু সিংভি সহ একাধিক বিরোধী নেতা বিলটির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রশ্ন, আগামীকাল কোনো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, দোষী সাব্যস্ত না করেই, শুধু ৩০ দিনের জন্য আটক রাখা হলো। তাহলেই কি তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হবেন?
অভিষেক মনু সিংভি বলেন, এভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করা যাবে। ভোটে হারাতে না পারলেও, স্বেচ্ছাচারী গ্রেফতারের মাধ্যমে সরানো সম্ভব হবে। অথচ কোনো ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে আঁচড় লাগবে না।
বিরোধীরা উদাহরণ টেনে বলেন, দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কথিত মদ নীতি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে রাখা হয়, অথচ তার বিচার আজও শুরু হয়নি।