English

27.7 C
Dhaka
বুধবার, জুলাই ২, ২০২৫
- Advertisement -

চার্লসের রাজ্যাভিষেকে থাকছেন না বাইডেন

- Advertisements -

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আগামী শনিবার ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই বিশাল আয়োজনে অংশ নিলেও সেখানে থাকছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক সময় বৈরি সম্পর্ক থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এখন বেশ ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে।

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল একসময় বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের লম্বা সময় ধরে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের রাজ পরিবারের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এই রীতি কি দুই দেশের মধ্যে অন্তর্নিহিত শত্রুতার দিকে ইঙ্গিত করে নাকি আসলে বিষয়টি সাধারণ কোন ব্যাপার?

রাজা চার্লস তার অভিষেক অনুষ্ঠানে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে যখন শপথ বাক্য পাঠ করবেন তখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকায় একটি নাম থাকবে না। তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বিবিসিকে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাইডেন অভিষেক অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্ত তিনি নিজে না গিয়ে তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও একজন কূটনৈতিককে পাঠাবেন বলে রাজা চার্লসকে ফোনে জানিয়েছেন।

বাইডেন কেন অনুপস্থিত থাকবেন সে বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তারা বলছে,. বাইডেন ভবিষ্যতে কোনো এক সময় যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

তবে বাইডেনের এই অনুপস্থিত থাকার খবর কিছুটা আলোড়নই তৈরি করেছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনজারভেটিভ দলের এমপি বব সিলি মন্তব্য করেছেন যে, জীবনে একবার হতে যাওয়া এই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাইডেন ‘কিছুটা অবহেলা’ করছেন বলেই মনে হচ্ছে।

ডেইলি মেইল পত্রিকার সহ সম্পাদক স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাইডেনের না আসার কারণ তার ‘পূর্ব পুরুষদের আইরিশ আভিজাত্যের অহংকার।’

কিন্তু ইতিহাসবিদরা বলছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অনুষ্ঠানে না আসার পেছনে সেরকম রাজনৈতিক কারণ নেই। রাজ অভিষেক অনুষ্ঠানে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের না যাওয়ার প্রথাটা আসলে তাদের শত বছরের ঐতিহ্য।

বাইডেন প্রথা অনুযায়ী অভিষেকে নিজে না গিয়ে বহর পাঠিয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানে না গেলেও রাজা চার্লসের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্রিটেন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই সফরের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।

অপরদিকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ব্রিটেন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর লরা বিয়ারস বলেন, রাজা চার্লসের অভিষেকে না যাওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে কোনো অপমানসূচক ইঙ্গিত বলে আমি মনে করি না।

তিনি যাচ্ছেন না কারণ কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট আজ পর্যন্ত অভিষেকে যাননি। কাজেই এই একবিংশ শতকে এসে নতুন করে কেন এটা শুরু করবেন তিনি?

অধ্যাপক বিয়ারস বলেন, আমেরিকার বিপ্লব আর ১৮১২ সালের যুদ্ধের পর রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের আগে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতামূলক সম্পর্কই ছিল।

রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র নিয়ে আমেরিকার মুগ্ধতা তৈরি হয়। কিন্তু তবুও সেসময়কার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন রানী ভিক্টোরিয়ার অভিষেকে অংশগ্রহণ করেননি।

সে সময়কার বাস্তবতায় একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে উপস্থিত হয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কার্যত সম্ভব ছিল না। আর সে কারণেই এরপর থেকে এটি রীতি হিসেবে তৈরি হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

ইতিহাসবিদদের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মোড় নেয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময় রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও তার মেয়ে, তৎকালীন রাজকুমারী এলিজাবেথ, ডুয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আইজেনহাওয়ার সেসময় লন্ডনে যৌথ বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

আইজেনহাওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস আগে রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু হয়। রানী এলিজাবেথ ততদিনে সিংহাসনে আরোহণ করলেও তার অভিষেক তখনও সম্পন্ন হয়নি।

কিন্তু আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে ব্রিটেনের রাজপরিবারের হৃদ্যতা থাকলেও তিনি প্রথা ভঙ্গ করেননি। রানীর অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি নিজে না গিয়ে বহর পাঠিয়েছিলেন।

তবে ইতিহাসবিদদের অনেকের মতে, সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোরিয়ার যুদ্ধ চলছিল। তাই প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের তখন ওয়াশিংটনে থাকাটা জরুরি ছিল। তবে রানীর অভিষেকে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার অনুপস্থিত থাকায় তার সঙ্গে রানীর সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি।

সবচেয়ে বেশি সময় ব্রিটেনের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকা শাসক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলে ১৪ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবার সাথেই রানীর দেখা হয়েছে। তিনজন প্রেসিডেন্ট তাদের মেয়াদকালে যুক্তরাজ্য সফর করেছেন। এছাড়া রানী তার শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমেরিকা সফর করেছেন চারবার। দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই বেশ ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের রাজার অভিষেকে না থাকার মানে দুদেশের সম্পর্ক ভালো নেই, এমনটা মনে করা ভুল হবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/e1of
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন