English

25.3 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫
- Advertisement -

পুলিশের ‘কামড়’ নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

- Advertisements -

বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মমতা ব্যানার্জির সরকারের। কখনো কয়লা পাচার, গরু পাচার, কখনো ডেঙ্গু আবার কখনো শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি। তবে এবার যা ঘটলো তার বোধহয় আগের সব রেকর্ডকেই ছাপিয়ে যেতে পারে- তা হলো পুলিশের ‘কামড়’। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ২০১৪ সালের ‘টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট’ (টেট) উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী অরুনিমা পালের বাম হাতে কামড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে কলকাতা পুলিশের এক নারী কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

গত বুধবার কলকাতার ধর্মতলার এক্সাইড মোড়ে অন্য চাকরিপ্রার্থীদের সাথে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন অরুনিমা পাল। তখন অরুনিমাসহ একাধিক চাকরিপ্রার্থীকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের টেনেহিঁচড়ে প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় ইভা থাপা নামে ওই নারী পুলিশ সদস্যকে অরুণিমার বাম হাতে কামড়াতে দেখা যায়। গণমাধ্যমের ক্যামেরার দৌলতে ওই ছবিও সামনে আসে, আর মুহূর্তের মধ্যেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। যদিও পুলিশের দাবি, অরুনিমা প্রথমে কামড়ে ছিলেন তারপরই পাল্টা আক্রমণ করে পুলিশ।

রাজ্য পুলিশের কর্মী ইভা থাপা বর্তমানে ডেপুটেশনে কলকাতা পুলিশে কর্মরত। বুধবার রাতে লালবাজারে রাখা হয় অরুনিমাকে। লালবাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসা করানো হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকি অরুনিমার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার জামিন পেয়ে রাতে উত্তর২৪পরগনা জেলার বেলঘড়িয়ার উমেশ মুখার্জি রোডে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন অরুনিমা। শুক্রবার সকাল হতেই হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে সরকারি হাসপাতাল ‘কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল’এ চিকিৎসা করাতে যান অরুনিমা। তার হাত পরীক্ষা করে ‘হিউম্যান বাইট’ অর্থাৎ মানুষের কামড়ের চিহ্ন মিলে। এরপর পুলিশের কামড়ানোর বিষয়টি সামনে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড়।

এদিন সকাল থেকেই তার বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। আর সংবাদ মাধ্যমের ভিড় দেখে পথ চলতি উৎসুক মানুষের জমায়েতও বাড়তে থাকে।

গণমাধ্যমের সামনে অরুনিমা বলেন,‘যেটা হয়েছে সেটা সত্যি। কলকাতা মেডিকেল কলেজও কামড়ানোর কথা বলেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু আজ সকালে সেই সরকারি হাসপাতালই মানুষের কামড়ের বিষয়ে সীলমোহর দিল।’

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে ব্যাপারে অরুনিমা জানান ‘আইনজীবীর সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ, এখন আমাদের কাছে বড় চিন্তার বিষয় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা।’

অরুনিমার অভিমত ‘এই কামড়টা আমার হাতে নয়, বরং বলা ভালো এটা আমাদের চাকরিপ্রার্থী সকলের হাতে কামড়। সমাজের ওপর কামড়।’

বিষয়টিতে লেগেছে রাজনীতির রঙ। পুলিশের এই ঘটনায় কেউ কেউ সমর্থন করলেও অনেকেই এর প্রবল বিরোধিতা করেছেন। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক এবং বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি বলেছেন, ‘প্ররোচনা দিলে অনেক কিছুই হতে পারে। বিষয়টি বিচারাধীন। কী প্ররোচনা তৈরি হয়েছিল সেটা দেখতে হবে।  যদি কাউকে হঠাৎ এমনভাবে উত্তেজিত করে দেওয়া হয়, আর তিনি যদি সেই উত্তেজনা প্রশমনে কোনো কাজ করেন তাহলে তা অপরাধ নয়।’

এই বিষয়টি নিয়ে অরুনিমা বলেন, ‘যারা প্রশাসনের শীর্ষ পদে রয়েছেন তাদের মধ্যে যদি মানবিকতা, চেতনা বা নৈতিক বোধ প্রকাশ না পাওয়া যায় তবে সর্বস্তরে কী বার্তা যাবে? হিংসা, প্রত্যাঘাত, বিদ্বেষ, স্বৈরাচার কখনোই সমাধানের পথ হতে পারে না। তার এই মন্তব্য অপ্রত্যাশিত, অপরিপক্বতার শামিল।’

তার আরো বক্তব্য, ‘আমাদের ২০১৪ সালের আন্দোলনে লাঠি-সোটা ছিল না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে আমাদের চাহিদা পূরণের দাবি জানিয়ে আসছি। বুধবারও ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। এরপরেও কেউ যদি এমন মন্তব্য করে থাকেন তবে সেটা কাম্য নয়। আমাদের বাঙালির পক্ষেও দুর্ভাগ্যজনক।’

তৃণমূলেরই আরেক বিধায়ক এবং রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘যা হয়েছে ঠিক হয়নি, পুলিশের কোড অব কন্ডাক্টে এটা করা যায় না। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।’

পুলিশের কামড় খাওয়া অরুনিমাকে দেখতে এদিন সকালে তার বাড়িতে আসেন রাজ্য বিজেপির নারী মোর্চার সভাপতি তনুজা চক্রবর্তী। এই ঘটনাকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একজন নারী। তারই পুলিশ ইভা থাপা অরুনিমাকে কামড়ে দিয়েছে। এটা কোনো ভদ্র সভ্য সমাজে হয় না।’

অরুনিমাসহ চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি নেত্রী বলেন, ‘নিজেদের অধিকারের লড়াইয়ে যেসব চাকরিপ্রার্থী আন্দোলন করছেন, তাদের সাথে আমরা আছি।  আগামী দিনে সমস্ত ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি।’

অভিযুক্ত কনস্টেবল ইভা থাপাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানান তনুজা। তার প্রশ্ন, এই ধরনের ব্যক্তিকে কীভাবে পুলিশের সদস্য বলে পরিচয় দেব?

পুলিশের কামড়ানো নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যটির বিরোধী রাজনৈতিক দল সিপিআইএম। আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে একটি অনুষ্ঠান থেকে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মো. সেলিম বলেন, ‘রুপির বিনিময়ে একের পর এক চাকরি বিক্রি হয়েছে। অথচ টেট উত্তীর্ণ যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা ধরণায় বসে পুলিশের লাঠি খাচ্ছে। এখন তো আবার পুলিশ কামড়েও দিচ্ছে।’

রাজ্য পুলিশকে নেড়ি কুকুরের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘আগে কলকাতায় নেড়ি কুত্তা বলতাম। আমরা নেড়ি কুত্তায় কামড়াতো জানতাম। এখন দেখছি কলকাতার পুলিশ নেড়ি পুলিশ হয়ে গেছে। যে পুলিশ রক্ষা করে সেই পুলিশকেই ভক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেছে। আর তাতেই আশঙ্কার মেঘ দেখছেন নাগরিক সমাজ।’

অরুণিমার প্রতিবেশী সুজিত রায় কর্মকার বলেন, ‘রক্ষক যদি ভক্ষকের মতো আচরণ করে সেটা কোনোমতেই কাম্য নয়। উনি একজন চাকরিপ্রার্থী, অন্যদিকে পুলিশের এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনোই একে সামর্থন করবো না, হওয়া উচিত নয়। চাকরিপ্রার্থীরা যেখানে ৬০০ দিনের বেশি ধরণা চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে পুলিশের এমন আচরণ অমানবিক। সরকারেরও দেখা উচিত যে, এই বিষয়টি ওই চাকরিপ্রার্থীর সাথে কী করে হলো?’ অভিযুক্ত পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বেলঘরিয়ার এই বাসিন্দা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/0x36
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন