নিজের স্ত্রীকে অভিনেত্রী ও ড্যান্সার নোরা ফাতেহির মতো দেখতে চাইতেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। আর এজন্য তাকে প্রতিদিনই তিন ঘণ্টা করে জোরপূর্বক ব্যায়াম করাত। কোনোদিন ব্যায়াম না করলে খাবার দেওয়া হতো না। কারণ—স্বামীর ধারণা ছিল, তিনি নাকি সহজেই বলিউড অভিনেত্রী নোরা ফাতেহির মতো সুন্দরী কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পারেন।
এমনই অভিযোগ করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের এক নারী।
ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী নারীলোলুপ প্রকৃতির এবং ইন্টারনেটে প্রায়ই অশ্লীল ভিডিও দেখতেন। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে গর্ভপাত ঘটানোর ফলে তিনি নিজের সন্তানকেও হারিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
৭৬ লাখের বিয়ে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৬ বছর বয়সি ওই নারীর নাম শানু ওরফে শানভি। তিনি গত ৬ মার্চ শিবম উজ্জ্বল নামে এক সরকারি স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের সঙ্গে বিয়ে করেন। তাদের বিয়েটা ছিল একটি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ।
বিয়েতে শানুর পরিবার প্রায় ৭৬ লাখ টাকা খরচ করে—যার মধ্যে ছিল ১৬ লাখ টাকার গহনা, ২৪ লাখ টাকার মাহিন্দ্রা স্করপিও গাড়ি এবং ১০ লাখ টাকা নগদ।
কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শানুর জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। শাশুড়ি গৃহকর্মে ব্যস্ত রাখতেন, স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দিতেন না। এমনকি দম্পতিকে বাইরে বের হতেও দেওয়া হতো না। একবার মশারি না টাঙানোয় শিবম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধরও করেন।
নোরা ফাতেহির মতো শরীরের জন্য নির্যাতন
শানুর অভিযোগ, স্বামী তাকে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন ও বডি শেমিং করতেন। তার ভাষায়, ‘আমার গড়পড়তা উচ্চতা এবং গায়ের রঙ ফর্সা থাকা সত্ত্বেও আমাকে কুৎসিত বলে অপমান করতেন। তিনি ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে নারীদের অশ্লীল ভিডিও দেখতেন এবং বলতেন, আমি নাকি তার জীবন নষ্ট করছি। কারণ তিনি নাকি সহজেই নোরা ফাতেহির মতো কাউকে স্ত্রী হিসেবে পেতে পারতেন’।
তাকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ব্যায়াম করতে বাধ্য করা হতো। কোনোদিন ব্যায়াম না করলে দিনের পর দিন খেতে দিত না।
গোপনীয়তার অভাব ও যৌতুকের দাবি
শানু জানান, তাকে কখনোই শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করতে দেওয়া হতো না। প্রায়ই শ্বশুর হঠাৎ ঘরে ঢুকে যেতেন, অজুহাত দিতেন ছেলে সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
একবার তো শিবম তার স্ত্রী শানুর মুখে ডায়েরি ছুঁড়ে মারেন। এ নিয়ে অভিযোগ করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন উল্টো নতুন জামাকাপড় ও ওভেন টোস্টার গ্রিলার আনার জন্য বাবার বাড়িতে যেতে বলেন।
এছাড়া শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে নিয়মিত নগদ টাকা, জমি, গহনা ও দামি পোশাক দাবি করা হতো। দাবি না মানলে শানুকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো।
গর্ভপাতের ঘটনা
এক পর্যায়ে গর্ভবতী হওয়ার খবর জানালে শানু ভেবেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়তো খুশি হবে। কিন্তু তারা একে কোনোরকম গুরুত্বই দেয়নি। উলটো কয়েক দিনের মধ্যেই ননদ ঋচি তাকে একটি গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ান।
শানুর ভাষায়, ‘শিবম (স্বামী) বলল, যখন আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি, তখন সন্তানকেও মেনে নেবে না’।
তাকে দইয়ের সঙ্গে বিশেষ মসলা মিশিয়ে খাওয়ানো হয়, যা বলা হয়েছিল ভ্রূণের জন্য ভালো। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তার গলা জ্বালা শুরু হয় এবং অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবশেষে ৯ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হলে দেখা যায় তিনি প্রচুর রক্তক্ষরণে ভুগছেন এবং গর্ভপাত হয়ে গেছে।
শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়ন
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুন অসুস্থ অবস্থায় শানুকে তার বাবা-মায়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেদিনই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ফোন করে তাকে গালাগালি করে এবং তালাকের হুমকি দেয়।
পরে ২৬ জুলাই শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলে তারা তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এমনকি তার গহনা ও জামাকাপড়ও ফেরত দেয়নি।
এরপর থেকে শানু তার বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকছেন।
অভিযোগ দায়ের
গত ১৪ আগস্ট শানু মানসিক, শারীরিক ও আবেগজনিত নির্যাতন, যৌতুক দাবি, জোরপূর্বক গর্ভপাত, ব্ল্যাকমেইল ও তালাকের হুমকির অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।