যুক্তরাজ্যে মানুষের হাড়, করোটির খুলি, দাঁত ও ত্বকজাত পণ্য অনলাইনে বিক্রির ঘটনা বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ বাজারকে আরও প্রসারিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনগত শূন্যতার কারণে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ‘কবর থেকে চুরি’ বা সমাধি থেকে হাড়গোড় তুলে আনার ঘটনা আবারও শুরু হতে পারে।
এসেক্সের দোকানদার হেনরি স্ক্র্যাগ তার দোকানে করোটির খুলি, মমি করা দেহাংশ, মানবচামড়ায় তৈরি মানিব্যাগ ও মুখোশ বিক্রি করেন। তার দোকানে মানব খুলির সাবস্ক্রিপশনও চালু আছে। এসব বিক্রি সরাসরি অবৈধ না হলেও বিশেষজ্ঞরা এটাকে মানব মর্যাদার প্রতি অবমাননা হিসেবে দেখছেন।
যুক্তরাজ্যে কবর অবমাননা অপরাধ। তবে আইন অনুযায়ী মৃতদেহ বা দেহাংশকে ‘সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফলে অবৈধভাবে কবর থেকে তুলে আনা হলেও সেই হাড় বা খুলি বিক্রি বা সংগ্রহ করা আইনত অপরাধ হিসেবে ধরা পড়ে না। ২০০৪ সালের হিউম্যান টিস্যু অ্যাক্ট ১০০ বছরের কম বয়সী দেহাংশ নিয়ে গবেষণা, চিকিৎসা ও প্রদর্শনী নিয়ন্ত্রণ করে। এর বাইরে ব্যক্তিগত সংগ্রহ বা বিক্রির ওপর সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
বিখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডেম সু ব্ল্যাক বলেন, মানুষ আশা করে মৃত্যুর পর শান্তিতে শুয়ে থাকবে। কিন্তু কবর খুঁড়ে হাড়গোড় বিক্রি করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ড. ট্রিশ বিয়ার্স বলেন, গত পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসা গবেষণায় কোনো মৃতদেহের ছবি তোলা যায় না, অথচ শিশুর মেরুদণ্ডকে ব্যাগের হাতল বানানো যায়—এটা অদ্ভুত বৈপরীত্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মানব খুলি ও হাড় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এসবের মধ্যে কিছু খুলিতে মাটি, মূলের দাগ বা গলনের চিহ্ন ছিল—যা ইঙ্গিত দেয় এগুলো হয়তো সম্প্রতি কবর থেকে তোলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি দপ্তর জানিয়েছে, সব মানবদেহাবশেষকে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। অবৈধভাবে কবর থেকে তুলে আনা কোনো অঙ্গ বা হাড় বিক্রি হলে সেটিকে ‘গর্হিত অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সূত্র : গার্ডিয়ান