কানাডার পার্লামেন্টে রাজা তৃতীয় চার্লস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেশটির বিরোধ ইস্যুতে কানাডার প্রতি সমর্থন জানানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার কানাডার পার্লামেন্ট ‘হাউস অব কমন্সে’ ‘স্পিচ ফ্রম দ্য থ্রোন’ পাঠ করবেন রাজা চার্লস।
এর আগে রাজা ও রানি ক্যামিলা অটোয়ায় পৌঁছালে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়, এই রাজকীয় দম্পতির রাজত্ব শুরুর পর এটাই তাদের প্রথম কানাডা সফর।
কানাডায় পৌঁছানোর পরপরই, দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান রাজা, সম্প্রতি ট্রাম্প-বিরোধী জনমতের জোয়ারে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সাথে একটি বৈঠক করেন।
কার্নি এমন ‘ঐতিহাসিক বন্ধন’-এর প্রশংসা করেন, যা ‘আমাদের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের শক্তি’সহ কানাডার স্বাধীন পরিচয় তৈরি করে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংকট কেবল শক্তিশালী করে’।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কার্নি রাজাকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান, যেখানে ট্রাম্পের কাছ থেকে কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকির বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে এটিই হবে প্রথমবারের মতো একজন রাজার ‘সিংহাসন থেকে ভাষণ’, যেখানে রাজার অটোয়ার পার্লামেন্টে আসার সিদ্ধান্তকে কানাডার প্রতি সমর্থনের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে দেখা হবে।
কানাডা সরকারের পরামর্শে রাজার ভাষণ লেখা হবে, আশা করা হচ্ছে এটি একটি স্পষ্ট, কূটনৈতিক বার্তা দেবে যে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘বিক্রয়ের জন্য নয়’।
কার্নি আগেই বলেছিলেন যে ফরাসি ও ইংরেজিতে প্রদত্ত ভাষণটি ‘আমাদের সময়ের গুরুত্বের সাথে’ মিলবে।
সোমবার (২৬ মে) বিকেলে রাজা ও কার্নি কানাডার গভর্নর-জেনারেলের বাসভবন রিডো হলে একটি বৈঠক করেন, যেখানে উভয়ই কানাডিয়ান পতাকার সামনে বসে ছিলেন।
এছাড়াও কানাডার আদিবাসী এবং ফার্স্ট নেশনস গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছিল, যার মধ্যে অ্যাসেম্বলি অব ফার্স্ট নেশনস-এর জাতীয় প্রধান সিন্ডি উডহাউসও ছিলেন।
অটোয়ার রোদে বেশ আরামদায়ক পরিবেশেই রাজা একটি বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। উৎসুক দর্শকরা তাকে অভ্যর্থনা জানান, তারা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং রাজার সাথে করমর্দনের জন্য ভিড় জমান।
‘কানাডা হুমকি ও ভয় অনুভব করছে। তার এখানে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,’ বলছিলেন অন্টারিওর মিসিসাগা থেকে আসা তেরেসা ম্যাকনাইট।
তার বোন ডায়ান সেন্ট লুইস, যিনি টরন্টোর কাছে বসবাস করেন, একমত পোষণ করে বলেন: ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাডিয়ানদের পাশে রাজার দাঁড়ানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
কানাডার মাটিতে রাজার প্রায় ২৪ ঘণ্টার এই সফরের জন্য অটোয়া বিমানবন্দরেও তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল।
রাজকীয় অতিথিদের সাথে দেখা করার জন্য কার্নি রানওয়েতে ছিলেন, যেখানে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাভাষী স্কুলের শিক্ষার্থী এবং ফার্স্ট নেশনস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
একটি কমিউনিটি অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান মুহূর্ত সৃষ্টির একটি তালিকাও ছিল, যেমন রাজার স্ট্রিট হকি খেলা শুরুর জন্য একটি পাক (খেলায় ব্যবহারের ডিস্ক) ফেলে দেওয়া এবং ম্যাপেল সিরাপের জার নেওয়া।
তবে এই ভ্রমণের মূল লক্ষ্য হবে রাজার মঙ্গলবারের ঐতিহাসিক ভাষণ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাষ্ট্র হওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে কানাডিয়ান সরকারের বার্তা প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এটি একটি কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার কার্যক্রমও বটে, কারণ যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ট্রাম্পের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ ছিলেন রাজা, যার মধ্যে তাকে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু কানাডায়, রাজাকে কানাডার পক্ষে কথা বলতে হবে। রিডো হলে আসা আরেকজন দর্শনার্থী যেমনটা বলেছিলেন: ‘সার্বভৌমত্ব গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি এর প্রতীক।’