English

36 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

কুকুরের কারণে ভাইরাল!

- Advertisements -

যুদ্ধে বিপর্যস্ত কোন এলাকা থেকে পালানোর সময় পোষা প্রাণীকে সঙ্গে নেয়া কি স্বার্থপরতা নয়? ভারতের মেডিকেল শিক্ষার্থী আর্য আদ্রিন মনে করেন, এটা মোটেও স্বার্থপরতা নয়। ইউক্রেন ছেড়ে আসার সময় তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার পোষা কুকুরটি। আলদ্রিন মনে করেন, পোষা প্রাণীটিকে ফেলে আসলেই বরং সেটা স্বার্থপরের কাজ। সে কারণেই তিনি পাঁচ মাস বয়সী সাইবেরিয়ার হাস্কি জাতের কুকুটিকে সঙ্গে রেখেন।  তাকে নিয়ে ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ভারতের কেরালায় পৌঁছেছেন।

ভারতের অনেক নাগরিক ইউক্রেন থেকে ফেরার সময় সঙ্গে পোষা বিড়াল, কুকুরকে নিয়ে এসেছেন।  রোমানিয়ার সীমান্তে আলদ্রিন তার পোষা প্রাণী জায়রাকে নিয়ে বাসে করে ফেরার সময় সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করেন। অল্প সময়েই ছবিটি ভাইরাল হয়। অনেকে আদ্রিনের প্রশংসা করেন। আবার অনেকে সমালোচনা করা শুরু করেন। নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেন, আদ্রিনের বাবা-মা তাকে পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছেন নাকি পোষা প্রাণী দেখাশোনা করতে পাঠিয়েছেন? কেউ কেউ বলেছেন, যুদ্ধ আক্রান্ত দেশ থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জরুরি ব্যবস্থাপনায় ভারত সরকার পোষা প্রাণীকে জায়গা দিল কেন?

নিন্দুকের সমালোচনার জবাবে আদ্রিন বলেছেন, মানুষের জায়গা দখল করেনি কুকুর জায়রা। কারণ সে খাঁচার ভেতরে থেকে জাহাজের কার্গোতে করে দিল্লীতে ফিরেছে। তিনি আরো বলেছেন, একজন মেডি্ক্যাল শিক্ষার্থী হিসেবে আমি শিখেছি কোন বৈষম্য না করে প্রাণীর প্রাণ রক্ষা করতে হবে। আর জায়রাকে ফেলে আসার বিনিময়ে কারো উপকারও হতো না।

অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী পোষা বিড়াল, কুকুরকে সঙ্গে নিয়েই ইউক্রেন ছেড়েছেন। যুদ্ধের মধ্যে মানবিক সঙ্কট চলাকালে প্রাণীদের রক্ষা করার বিষয়টি খুব সংবেদনশীল ইস্যু। ২০২১ সালে ব্রিটিশ নাগরিক পেন ফারদিং প্রাণীদের জন্য আফগানিস্তানে একটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করেছিলেন। সে সময় পোষা বিড়াল, কুকুরকে রেখে দেশে ফেরত যাওয়ায় ব্রিটিশ নাগরিকরা খুব সমালোচিত হয়েছিলেন। ফারদিং জানান, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর একই কাজ করে আফগানরা সমালোচিত হয়নি।

তিনি বলেন, জীবনের হুমকি থাকায় তিনি পোষা প্রাণীগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরতে পারেননি। পরে আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা ওই প্রাণীগুলোকে যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

আদ্রিন ইউক্রেনে পড়তে যান ২০২০ সালে। অল্প সময়ে সেখানে কেরালা থেকে যাওয়া কিছু বন্ধুও জুটে যায়। আদ্রিন প্রাণীদের পছন্দ করে জানতে পেরে ওইসব বন্ধুদের একজন আদ্রিনকে গত ডিসেম্বর মাসে দুমাস বয়সী কুকুরছানা উপহার দেন। খুব তাড়াতাড়ি জায়রার সঙ্গে আদ্রিনের খাতির হয়ে যায়। ইউক্রেনে বোমা বিষ্ফোরণ শুরু হলে আদ্রিনের একমাত্র দুশ্চিন্তা ছিল জায়রাকে নিয়ে। আদ্রিন ঠিক করেছিলেন, পরিস্থিতি যাই হোক তিনি জায়রাকে একলা ফেলে যাবেন না। বন্ধুদের কেউ কেউ জায়রাকে অস্থায়ীভাবে কারো কাছে দিয়ে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আদ্রিন জায়রাকে কারো কাছে দেননি। তিনি মনে করেন, অন্য কেউ তার মতো করে জায়রার যত্ন নিতে পারবে না।

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন ত্যাগ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই জানার পর আদ্রিনের মা জায়রাকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার বিষয়ে সমর্থন দেন। আদ্রিয়ানের বাবা প্রথমে সমর্থন না করলেও এক পর্যায়ে রাজি হয়েছেন।

যুদ্ধের ঝুকির মধ্যেও আদ্রিন জায়রার জন্য পাসপোর্ট করেন। ভ্যাকসিন দেয়ার কাগজপত্র প্রস্তুত করেন।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের দুদিন পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক বন্ধুর সহায়তায় দেশে ফেরত আসবে এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হন আদ্রিন আর জায়রা। এর পরদিন তারা বাসে করে রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছান। জার্নির পুরো সময়ে জায়রা আদ্রিনের শরীর ঘেষে চুপচাপ বসে থেকেছে। বাসের চালক তাদের নামিয়ে দন সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। যানবাহনের দীর্ঘ সারির কারণে তারা অত দূরে নেমে যেতে বাধ্য হন।

বাস থেকে নামার পর তারা হাঁটতে শুরু করেন। আদ্রিন আর তার বন্ধুরা সঙ্গে জুস, বিস্কুট রেখেছিলেন। জায়রার জন্য খাবার সঙ্গে নেয়া হয়েছিল। তবে রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছানোর আগে কোন দোকানে পানি বা ব্রেড কিনতে পাওয়া যায়নি।

পথেই আদ্রিনের পিরিয়ড এবং কোমর ব্যথা শুরু হয়। এক পর্যায়ে জায়রাও হাঁপাতে শুরু করে। আদ্রিন বুঝতে পারেন জায়রা আর হাঁটতে পারবে না। তাকে কোলে নিতে হবে।

আদ্রিন বলেন, আমি যখন ১৬ কেজি ওজনের জায়রাকে কোলে নিই সে আমার কাঁধে শিশুর মতো এলিয়ে পড়ে। হাঁটার সময় দলের অন্যরাও জায়রাকে কোলে নিতে সহায়তা করেছেন। ১০-১২ কিলোমিটার পথ হাঁটার শক্তি পেতে আদ্রিন বেশ কিছু খাবার আর পানীয় রাস্তায় ফেরে আসেন। আদ্রিন যখন রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছান তখন তার কাছে জায়রার খাবার আর ভ্রমণের কাগহপত্র ছাড়া আর কিছু ছিলো না।

রোমানিয়া সীমান্তে শত শত উদ্বিগ্ন মানুষের সঙ্গে আদ্রিন প্রায় সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। যখন সীমান্ত খুলে দেয়া হয় সেসময় আদ্রিন আর জায়রা ব্যাপক ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে যান। আদ্রিন বলেন, এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো, অনেক বিপজ্জনক হলেও আবার আগের জায়গা ভিন্নিস্তয়া ফিরে যাই।

সীমান্তে অপেক্ষার সময় কুকুরের খাবারও ফেলে দিতে হয়। কারণ আদ্রিনের পক্ষে বোঝা টানা আর সম্ভব হচ্ছিলো না।

শেষ পর্যন্ত সীমান্ত পাড়ি দিতে আদ্রিনের সুযোগ আসে। সীমান্ত পার হওয়ার পর স্বস্তির অনুভূতি বলে বুঝাতে পারবো না, আদ্রিন বলেন।

ভারতের পথে জার্নি:
সীমান্ত পার হওয়ার পর আদ্রিয়ানদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়। সেখানে তারা খাবার ও পানি পায়। দয়ালু স্বেচ্ছাসেবকরা আদ্রিনকে একজোড়া ব্যবহৃত জুতাও পরতে দেয়। কারণ আদ্রিনের জুতা ছিঁড়ে গিয়েছিল। বুখারেস্টে হেনরি কোয়ান্দা এয়ারপোর্টের কাছে আরেক আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগে সেখানে তারা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। এই আশ্রয়কেন্দ্রে রোমানিয়ার পুলিশ জায়রাকে আরো খাবার দেন। এয়ারপোর্টের ট্যাক্সি পেতেও পুলিশ সহায়তা করে। বিমানবন্দরে ভারতীয় উড়োজাহাজে ওঠার আগে রোমানিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, জায়রাকে খাঁচায় করে নিতে হবে।

জায়রাকে দিল্লীর ফ্লাইটে ফিরে পাবার আগে অনেক অনেক ঘটনা ঘটেছে। তারা একটি ফ্লাইটও মিস করেছিলেন। ফ্লাইটে আদ্রিনকে যে খাবার দেয়া হয় সেখান থেকে সামান্যই খেয়ে বাকিটুকু জায়রার জন্য রেখেছিলেন। ফ্লাইট এর টাইম পিছিয়ে দেয়া হলে দিল্লী থেকে কেরালা যাওয়াও পিছিয়ে যায়। ওই ফ্লাইটে প্রাণী সঙ্গে নেয়ার অনুমতি না থাকায় আদ্রিন ফ্লাইট পরিবর্তন করেন। ততক্ষণে আদ্রিন-জায়রার জার্নি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কেরালা রাজ্য সরকার আদ্রিনের প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করে।

আদ্রিন আর জায়রা যখন কোচি বিমানবন্দরে পৌঁছায় তখন বেশ কিছু সাংবাদিক তাকে স্বাগত জানান এবং সাক্ষাৎকার নেন।

কেরালা পৌঁছে আদ্রিন প্রথমে জায়রাকে পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার দেখানোর পর নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন।

ভারতে পৌঁছার পর জায়রা ভালই আছে, জানালেন আদ্রিন। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, আমি এখন জায়রাকে কিছুটা ঈর্ষা করতে শুরু করেছি। কারণ সে আমার চেয়ে আমার মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশী পছন্দ করছে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন