English

29 C
Dhaka
শনিবার, অক্টোবর ২৫, ২০২৫
- Advertisement -

গাজায় আহত-অসুস্থদের চিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল

- Advertisements -

গাজায়  যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ওই উপত্যকায় আহত-অসুস্থদের চিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। সেখানকার হাজার হাজার আহত ও অসুস্থ মানুষ জরুরি চিকিৎসার জন্য বিদেশে সরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু ইসরায়েলের কড়াকড়ি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত অনুমতির কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলো এখনও রোগীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়। চিকিৎসার অভাব, জরুরি ওষুধ ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং সীমিত লোকবল, সব মিলিয়ে হাসপাতালগুলো এখন বাঁচানোর জায়গা না হয়ে যেন মৃত্যুর করিডরে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য রোগী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

নাসের হাসপাতালে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ডে শুয়ে আছে দুটি ১০ বছর বয়সী ছেলে—একজন ইসরায়েলি গুলিতে গলা থেকে নিচ পর্যন্ত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত, আরেকজনের মস্তিষ্কে টিউমার।

নাজুক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তারা দু’জন সেই প্রায় ১৫ হাজার রোগীর মধ্যে আছেন, যাদের জরুরি চিকিৎসার জন্য বিদেশে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

হাসপাতালে আবু সাঈদ আলতোভাবে তার ছেলে আমিরের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, দক্ষিণ গাজার একটি তাঁবুতে থাকার সময় ইসরায়েলি ড্রোন থেকে ছোড়া একটি গুলি আমিরের গায়ে লাগে। গুলিটি তার মেরুদণ্ডের মাঝখানে আটকে আছে, ফলে সে এখন সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।

আমিরের বাবা বলেন, “তার জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু বিষয়টি জটিল। চিকিৎসকেরা বলেছেন, অপারেশন করলে তার মৃত্যু, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে। তাকে এমন জায়গায় অস্ত্রোপচার করতে হবে, যেখানে যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে গাজা সেই অবস্থায় নেই।” টানা দুই বছর যুদ্ধের পর এখানকার হাসপাতালগুলো এখন ভীষণ সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

নিজের ছোট ভাই আহমেদ আল-জাদের শয্যার পাশে বসে তার বোন সাহদ বলেন, “দুই বছরের যুদ্ধ আর বাস্তুচ্যুত জীবনের পুরো সময়টাতেই ভাইটি ছিল তার একমাত্র সান্ত্বনা। তার বয়স মাত্র ১০ বছর। যখন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেত, তখন সে বাইরে গিয়ে পানি বিক্রি করত, যাতে কিছু অর্থ ঘরে আনতে পারে। কয়েক মাস আগে আহমেদের শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। আহমেদের মুখ একপাশে বেঁকে যেত।”

তিনি বলেন, “একদিন সে আমাকে বারবার বলছিল, আমার মাথা ব্যথা করছে। আমরা ভেবেছিলাম সামান্যই, তাই শুধু প্যারাসিটামল দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর তার ডান হাতটা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।”

আহমেদকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান সাহদ।

তিনি বলেন, “তাকে হারাতে পারব না। আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের বাবা, আমাদের ঘর আর আমাদের স্বপ্ন হারিয়েছি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর একফোঁটা আশা পেয়েছিলাম—হয়তো এক শতাংশ সম্ভাবনাও আছে, আহমেদ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবে।”

বুধবার যুদ্ধবিরতি শুরুর পর প্রথমবারের মতো গাজা থেকে চিকিৎসার জন্য রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার অভিযান পরিচালনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এই অভিযানে ৪১ জন রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা ১৪৫ জন অভিভাবক বা সহযাত্রীকে ইসরায়েলের কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে বাইরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে তাদের জর্ডানে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন জর্ডানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জাতিসংঘের এই সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় হাজার হাজার অসুস্থ ও আহত মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দ্রুত বড় পরিসরে চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও চায়, পূর্বের মতো গাজার রাফাহ সীমান্ত দিয়েও রোগীদের মিসরে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হোক।

তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত—বিশেষ করে নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে না। ২০২৪ সালের মে মাসে যুদ্ধের সময় গাজার মিসরীয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল এই পথটি বন্ধ রেখেছে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, “সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হবে যদি ইসরায়েল গাজার রোগীদের দখলকৃত পশ্চিম তীরের হাসপাতালে বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমে, চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেয়—যেমনটা যুদ্ধের আগে করা হতো।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও ২০টিরও বেশি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগেই এই আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চিকিৎসা সরঞ্জাম, অর্থায়ন ও চিকিৎসাকর্মী পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন।

মাউন্ট অব অলিভসের অগাস্টা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. ফাদি আতরাশ বলেন, “যদি পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের হাসপাতালগুলোর সঙ্গে চিকিৎসা রুটটি পুনরায় চালু করা যায়, তাহলে অল্প সময়েই শত শত রোগীকে সহজে ও দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।”
ডা. ফাদির ভাষায়, “পূর্ব জেরুজালেমে রোগী পাঠানোই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর উপায়, কারণ এখানে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে ১৪০ শিশুসহ অন্তত ৭৪০ জন রোগী, চিকিৎসার অপেক্ষায় থেকে মারা গেছে।

নাসের হাসপাতালের শিশু ও মাতৃ বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, “একজন চিকিৎসকের জন্য সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত হলো—রোগ নির্ণয় করতে পারা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা চিকিৎসা দিতে না পারা। এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে, আর দুঃখজনকভাবে আমাদের সীমিত সক্ষমতার কারণে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে।”

যুদ্ধবিরতির পরও অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে এবং এখনও অনেকের অবস্থা গুরুতর বলেও তিনি জানান।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/lcd0
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন