English

27.2 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
- Advertisement -

গাজার ত্রাণকেন্দ্র যেন ‘বধ্যভূমি’: ত্রাণ নিতে আসা আরও ১৩ জনকে হত্যা করেছে আইডিএফ

- Advertisements -

বাচ্চারা সারাক্ষণ ক্ষুধায় কান্না করে। ওরা রুটি চায়, ভাত চায়, যে কোনো খাবার চায়। ঘরে কিছু আটা ও শুকনো খাবার ছিল। এখন সব শেষ। আমরা এখন ত্রাণ সংস্থার খাবারের ওপর নির্ভরশীল। তারা যে মসুর ডাল দিয়েছিল, তাতে সন্তানদের ক্ষুধা মেটে না।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন গাজার বাসিন্দা ইউসেফ আল-আজুরি। মিডল ইস্ট মনিটরে সম্প্রতি তাঁর ভাষ্যে উঠে আসে ত্রাণ নিতে যাওয়া গাজার মানুষের করুণ চিত্র। তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে ত্রাণকেন্দ্রে যেতে তাঁকে রাতের আঁধারে হামাগুঁড়ি দিয়ে অন্ধকারে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কীভাবে স্নাইপার দিয়ে গুলি চালিয়ে লোকজনকে হত্যা করছে ইসরায়েলের বাহিনী।

বাড়িঘর হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁবুতে থাকা ইউসেফের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছোট শিশু সন্তানদের জন্য সামান্য খাবার জোগাড় করা। এ খাবার নিতে গিয়ে প্রতিদিনই হত্যার শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইউসেফ বলেন, এ যেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর খেলা। তারা অভুক্ত রেখে, অপমান করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।

গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার নতুন এ পদ্ধতি খুব বেশি দিন আগে শুরু করেনি ইসরায়েল। দীর্ঘদিনের অবরোধ তুলে নিয়ে মাস দেড়েক আগে তারা সীমিত সংখ্যক ত্রাণের ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। এর পরই শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি সশস্ত্র সংগঠন ত্রাণ দেওয়ার নামে এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মিলে গড়ে তুলেছে, যাদের অনুমোদন দেয়নি জাতিসংঘ। তারা গাজার ত্রাণ কেন্দ্রগুলোকে কার্যত বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। প্রতিদিনই ক্ষুধার্ত মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। সোমবার ত্রাণ আনতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন।

কথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে ত্রাণের জন্য অপেক্ষার মানে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত এসব ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫৮৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৮৬ জনেরও বেশি। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারেৎজকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরায়েলি সেনা বলেন, ত্রাণকেন্দ্রগুলো এখন ‘কিলিং ফিল্ড’ বা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আরেক ইসরায়েলি সেনা জানান, তারা এমনটা করছেন সরকারি নির্দেশ পেয়েই। তিনি জানান, তিনি গাজার যে এলাকায় অবস্থান করছেন, সেখানে প্রতিদিন এক থেকে পাঁচজন নিহত হন। এটি একটি মৃত্যু উপত্যকা।

তীব্র অপুষ্টিতে ৬০ হাজারের বেশি শিশু
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে আর কোনো যুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র বানানো হয়েছে; এমনটা দেখা যায়নি। ইসরায়েল নৃশংসতম এ হত্যা-পদ্ধতি চালু করেছে গাজায় শিশু-বৃদ্ধসহ সব বাসিন্দার জন্য। বিশেষ করে গাজার শিশুরা অপুষ্টিতে ধীরগতির মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সোমবার আল আকসা মার্টার্স হাসপাতালের মুখপাত্র খলিল আল-ডাকরান বলেছেন, প্রচণ্ড খাদ্যসংকট পুরো গাজাকে গ্রাস করছে।

উপত্যকায় ৬০ হাজারের বেশি শিশু খাদ্যাভাবে  তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ইসরায়েল শিশুদের অভুক্ত রাখার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বর্তমানে পুরো গাজায় এক কার্টন দুধও নেই।

হামলার তীব্রতা বেড়েছে, হাসপাতালে ক্ষয়ক্ষতি
ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর গুলি ছাড়াও গাজায় অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে সোমবার এক দিনে আরও ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে উত্তর গাজায়। বিবিসির অনলাইন জানায়, উত্তর গাজা সমুদ্রতীরের একটি ক্যাফেতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। ক্যাফেটি সাধারণত অধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যবহার করতেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক ডজন।

মধ্য গাজার দায়ের আল বালাহ’র আল আকসা মার্টার্স হাসপাতালেও হামলা চালায় ইসরায়েল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অবস্থায় গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত বেড়ে ৫৬ হাজার ৫৩১ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২ জন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/24pc
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন