১০ অক্টোবর যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, তখন অনেক ফিলিস্তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তারা দুই বছর ধরে টানা বোমাবর্ষণ সহ্য করেছেন, যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরক শক্তির প্রায় ছয় গুণের সমান ছিল। অথচ গাজার আয়তন হিরোশিমা শহরের অর্ধেকেরও কম। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও খাদ্য সংকটে রয়েছে। অনেকেই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার খাবার পান।
গাজায় বিধ্বংসী কার্যক্রম চলেছে সর্বত্র। সব হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমাবর্ষণ হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়িঘর এবং স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতের লাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পুরো উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃতদেহ রয়েছে। যেগুলো এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
তবুও গাজার জনগণ যে স্বস্তি আশা করেছিল, তা অবশেষে পায়নি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরই ইসরায়েলি সরকার আবারও বোমাবর্ষণ শুরু করে। তারপর থেকে সেই হামলা আর থামেনি।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির ৪৪ দিনে ইসরায়েল প্রায় ৫০০ বার তা লঙ্ঘন করেছে। যার ফলে ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল গত ২৯ অক্টোবর। দখলদার বাহিনী সেদিন ১০৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ৫২ শিশুও ছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজা শহরের জেইতুন পাড়ায় ভবনে বোমা ফেলা হয়। এতে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের মধ্যে একটি পুরো পরিবারও ছিল।
কেবল বোমাবর্ষণই থামেনি তা নয়, দুর্ভিক্ষও থামেনি। চুক্তি অনুসারে গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা ইসরায়েল পূরণ করেনি। প্রতিদিন মাত্র ১৫০ ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তারা মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য এবং শাকসবজিসহ পুষ্টিকর খাবারসহ অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ, তাঁবু এবং আশ্রয়ের অন্যান্য উপকরণের প্রবেশও রোধ করছে। ফলে জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদার এক-চতুর্থাংশও পূরণ হচ্ছে না। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গুদামে গাজাবাসীর জন্য মাসের পর মাস খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে, তবে এখনও তা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজাজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশুকে অস্থায়ী শিক্ষার স্থানে পড়ানো হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, গাজার ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে মৌলিক জিনিসপত্র ছাড়াই মেঝেতে পড়ছে শিশুরা। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা সম্পূর্ণরূপে সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার খাবার পান।
যুদ্ধবিরতি হুমকির মুখে বলে মনে করে হামাস
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছে। ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির হুমকির মুখে রয়েছে বলে তাদের জানিয়েছে হামাস। হামাস জানায়, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। রোববার এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, মিসরে বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে তারা। তবে যুদ্ধবিরতির ক্রমাগত লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে তারা। হামাস মনে করে, ইসরায়েল শান্তিচুক্তিকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
পাল্টা হামলার চিন্তা করছে হিজবুল্লাহ
লেবাননের রাজধানীর দক্ষিণ উপকণ্ঠে এক হামলায় কমান্ডারকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার এক দিন পর হিজবুল্লাহ সামরিক প্রধান হাইথাম আলি তাবাতাবাইকে হত্যার জন্য ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে ইরান। এদিকে লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হাইথাম আলি তাবাতাবাইসহ আরও চারজন নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহমুদ কামাতি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা সীমা অতিক্রম করেছে এবং হিজবুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানাবে কিনা, তা বিবেচনা করছে।
