English

27.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
- Advertisement -

চীনের সঙ্গে চিপ-যুদ্ধ: ৫ বিলিয়ন ডলারের রিসার্চ হাব চালু করছে আমেরিকা

- Advertisements -

মাইক্রোচিপ বা সেমিকন্ডাক্টর যুদ্ধে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় এবার বড় উদ্যোগ নিল বিশ্ব পরাশক্তি আমেরিকা। এই লড়াইয়ে চীন যাতে কোনওভাবেই জয়ী হতে না পারে, সেজন্য ৫ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর (চিপ) রিসার্চ কনসোর্টিয়াম চালুর পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে তেল সম্পদ নিয়ে যুদ্ধ হলেও এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনৈতিক শক্তি- চীন ও আমেরিকার মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ নিয়ে।

গত শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি সেন্টার বা এনএসটিসি প্রতিষ্ঠা করার কথা জানান। ২০২২ সালে চিপ অ্যাক্ট পাসের পর এই শিল্পে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সেমিকন্ডাক্টর হচ্ছে- আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার্য নানা জিনিসে শক্তি যোগায়। একটুখানি সিলিকনের টুকরো দিয়ে তৈরি এই চিপ ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ব্যবহৃত হয়, যা এরই মধ্যে বহুমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে এর বিশাল বাজার।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৫০,০০০ কোটি ডলারের বাজার এই সেমিকন্ডাক্টরের- যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ফুলে-ফেঁপে দ্বিগুণ আকার নেবে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ান দেশগুলোর ওপর বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতেই বিভিন্ন দেশের সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপ উৎপাদনে বড় পরিসরে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ২০২২ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএস চিপস অ্যাক্ট আইন পাস করে।

তবে কম্পিউটার চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর তৈরি ততটা সহজ নয়। অ্যারিজোনায় উন্নত চিপ তৈরির কারখানা নির্মাণের কথা ভাবলেও সমস্যায় পড়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। কোম্পানিটির অভিযোগ, দক্ষ কর্মী না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে দ্রুত সময়ে কারখানা নির্মাণ ও চিপ উৎপাদনের যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তাতে দুটি সমস্যা হবে। প্রথমত, একই পণ্য অনেক বেশি পরিমাণে তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, তা বর্জ্যে রূপান্তরিত হবে।

এর আগে মার্কিন চিপ গবেষণা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। এতে বলা হয়, মহামারীর সময় চিপসের সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ উন্নত চিপই এখানে তৈরি হয়ে থাকে।

বলাবাহুল্য, করোনা সংকট কিছুটা কেটে গেলেও ২০২১ সালেও চিপের প্রবল সংকট তৈরি হয়। সে সময় অল্পসংখ্যক সরবরাহকারীর ওপর বৈশ্বিক নির্ভরতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আর মূলত সে সময়েই চিপ তৈরিতে বিশেষ নজর আসে যুক্তরাষ্ট্রের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চিপ তৈরিতে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নও ৪ হাজার ৩০০ কোটি ইউরোর প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যুক্তরাজ্যও চিপ উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।

টেকনোলজির গবেষণা বিশ্লেষক হান্না ডোহমেন জানান, ইউএস চিপস অ্যাক্ট অনুসারে ৫০০-এর বেশি কোম্পানি তাদের প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আবেদন করেছে। এই চিপ নিয়ে ভারত বেশ এগিয়েছে। চীনের সঙ্গেও দেশটির তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সহযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই চিপ তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কোম্পানি, নানান দেশ। এদের জটিল নেটওয়ার্ক এমনভাবে একটির সাথে আরেকটি সম্পৃক্ত যে সোজা কথায়– এই সরবরাহ ব্যবস্থা বা ‘সাপ্লাই চেইনের’ নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে, তার হাতেই উঠবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হয়ে ওঠার চাবিকাঠি।

এই প্রযুক্তির বেশির ভাগই আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তবে সমস্যা হল- এখন এই চিপ তৈরির প্রযুক্তি হাতে পেতে চাইছে চীন। ফলে আমেরিকা চাইছে যেন কিছুতেই তা হতে না পারে।

কত জটিল এই ‘চিপ-তৈরি’?

সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের জ্ঞান এবং এর উৎপাদনের সাথে অন্য অনেকগুলো বিষয় গভীরভাবে জড়িত।

একটা আইফোনের ভেতরে যে চিপগুলো থাকে তা ডিজাইন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, এগুলো তৈরি হয় তাইওয়ান, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ায়, এরপর সেগুলো এ্যাসেম্বলিং বা একসাথে সন্নিবেশ করার কাজটা হয় চীনে।

তবে ভারত এখন এই শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ করছে এবং তারা হয়তো আগামী দিনগুলোতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

সেমিকন্ডাক্টর আবিষ্কৃত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ধীরে ধীরে এর উৎপাদন বা ম্যানুফ্যাকচারিং-এর কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো।

চিপ তৈরির ক্ষেত্রে মূল প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে এর আকার এবং কর্মক্ষমতার ক্ষেত্রে ।

সবাই চাইছে সবচেয়ে দক্ষ এবং সেরা চিপ বানাতে। অন্যদিকে এগুলো আকারে যত ছোট হবে, ততই ভালো।

চিপগুলোর ভেতরে থাকে ট্রানজিস্টর– যাকে বলা যায় অতিক্ষুদ ইলেকট্রিক সুইচ– যা বিদ্যুতের প্রবাহকে চালু করতে বা বন্ধ করতে পারে।

চ্যালেঞ্জটা হল– একটা অতি ক্ষুদ্র সিলিকনের টুকরোর মধ্যে আপনি কতগুলো ট্রানজিস্টর বসাতে পারেন, সেইখানে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এটাকে বলে “মূর’স ল”– যার মূল কথা একটা সময়ে চিপে ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব দ্বিগুণ করা। তবে এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেই এই রিসার্চ হাব তৈরি করছে আমেরিকা। 

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/q8rg
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন