চীনে ‘দানমেই’ সাহিত্য নামে পরিচিত সমকামী ইরোটিকা লেখার অপরাধে অন্তত ৩০ জন নারী লেখককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নারীরা অধিকাংশই তরুণী, যাদের বয়স বিশের ঘরে। কেউ কেউ জামিনে মুক্ত হলেও তাদের অনেকে এখনো বিচারের অপেক্ষায়। খবর বিবিসি।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, জামিনে মুক্ত হওয়া কয়েকজন ‘দানমেই’ সাহিত্যিক সামাজিক মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘অচেনা লোকদের সামনে বিবস্ত্র করে পরীক্ষা, পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়া, সেই চেয়ারটিতে বসা, কাঁপতে থাকা শরীর—কোনো কিছু ভুলতে পারছি না।’
এই লেখিকেরা হাইতাং লিটারেচার সিটিতে থেকে তাদের লেখা প্রকাশ করতেন। এটি মূলত তাইওয়ান থেকে পরিচালিত একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে সমকামী বা ‘দানমেই’ ঘরানার গল্প প্রকাশ পায়। এসব গল্পে পুরুষ চরিত্রদের প্রেম, যৌনতা ও সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। কখনো কখনো তা কল্পবিজ্ঞান বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেও রচিত হয়।
চীনের পর্নোগ্রাফি-বিরোধী আইনের আওতায় গ্রেপ্তারের শিকার লেখিকাদের বিরুদ্ধে ‘অশ্লীল বিষয়বস্তু তৈরি ও বিতরণ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। কেউ কেউ সামান্য অর্থ উপার্জন করলেও সেই আয়ের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক লেখকের অ্যাকাউন্টে থাকা মাত্র ৪ হাজার ইউয়ান মুদ্রাও অপরাধের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমকামী সাহিত্য নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি নতুন নয়। যদিও হেটেরোসেক্সুয়াল বা বিপরীতলিঙ্গীয় ইরোটিক সাহিত্যে সেখানে তেমন সেন্সর চলে না। এমনকি নোবেলজয়ী মো ইয়ানের লেখায়ও গ্রাফিক যৌন দৃশ্য রয়েছে। তারপরও ‘দানমেই’ ঘরানার সাহিত্যকে বেশি বিধ্বংসী মনে করে চীনা সরকার। কারণ, এটি নারীদের নিজস্ব কামনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতাকে পুরুষ চরিত্রের ছায়ায় প্রকাশ করতে দেয়, যা সমাজের প্রচলিত লিঙ্গের ভূমিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গ্রেপ্তারের শিকার নারী লেখকদের একজন লিখেছেন, ‘আমি শব্দে শব্দে উপার্জন করেছি। কিন্তু সবকিছু ভেঙে পড়তেই যেন আমার শ্রমকেই অস্বীকার করা হলো।’
আরেকজন বলেছেন, ‘আমার বয়স মাত্র ২০, আর এখনই জীবনটা শেষ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।’
জানা গেছে, সিনেমা বা সিরিজে রূপান্তরের জন্য ২০২১ সালে এই ঘরানার ৬০টি উপন্যাস কিনে নেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে দামি একটি বইয়ের স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন ইউয়ানে। এত জনপ্রিয়তা থাকার পরও আজ সেই লেখকেরা সামাজিকভাবে অপমানিত, রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধী।
যারা কিছু দিন আগেও নারীবান্ধব একটি সাহিত্যের জগতে আশ্রয় খুঁজেছিলেন, এখন তারা আইনের ভয় আর সামাজিক লজ্জার মুখোমুখি। অনেকেই তাদের আইডি মুছে ফেলেছেন, পোস্ট ডিলিট করেছেন। কিন্তু অনেকে এখনো আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন। যেমনটি একজন লিখেছেন, ‘যদি ফিরে যাওয়া যেত, আমি আবারও লিখতাম। আর আমি লিখতেই থাকতাম।’