তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে তাণ্ডব চালানোর পর দ্রুত গতিতে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালেই অন্ধ্র উপকূলে সর্বশক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর এবং মছলিপত্তনমের মাঝামাঝি কোনো জায়গায় আছড়ে পড়বে মিগজাউম।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পুদুচেরির উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে শক্তি বৃদ্ধি করেছে মিগজাউম। ঘূর্ণিঝড় থেকে পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর প্রভাবেই দক্ষিণ ভারতের পূর্ব উপকূল জুড়ে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
মিগজাউমের প্রভাবে ভারী বর্ষণে ইতোমধ্যেই ভেসে গেছে চেন্নাই। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে বহু এলাকাই এখন জলমগ্ন। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট কার্যত নদীতে পরিণত হয়েছে। বহু যানবাহন পানির স্রোতে ভেসে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ, দেওয়াল এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করায় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা সাময়িক ভাবে স্থগিত।
অচল হয়ে পড়েছে মেট্রো স্টেশনগুলোও। অবিরাম বর্ষণের কারণে চেন্নাইয়ের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে শহরের বিশাল এলাকা। পানির স্রোতে ভেসে গেছে বহু গাড়ি।
বৃষ্টির কারণে চেন্নাই বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল প্লেন ওঠানামা। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অন্তত ১২টি প্লেনকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাতিল হয়েছে চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।
উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্গতদের সহায়তার জন্য অন্তত পাঁচ হাজার ত্রাণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতিতে নিবিড় নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন।
চেন্নাই শহরে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেন্নাইয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি অফিসের কর্মীদেরও বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
চেন্নাই বিমানবন্দরের রানওয়ে ভেসে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আসা-যাওয়ার সব বিমান বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেনও। বন্ধ রাখা হয়েছে বাস চলাচল। ফলে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
অন্য দিকে মিগজাউমের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই। এসব জেলায় টানা তিনদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে দুর্যোগের দাপট বেশি হবে না। বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। মঙ্গলবার বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে উপকূলঘেঁষা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার বেশ কয়েক জায়গায় ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
বুধবার থেকে দক্ষিণের বাকি জেলাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার উপকূলবর্তী জেলা ছাড়াও হালকা বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান এবং নদিয়ায়। শনিবার থেকে বৃষ্টি কমবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।