টোকিওর এক শান্ত দুপুরে, ৩৮ বছর বয়সী ইউকো তাকাহাশি রোদ মাখা বারান্দায় বসে চা পান করছেন কোলে তার সঙ্গী—একটা ছোট্ট, তুলতুলে রোবট। সে চোখ বন্ধ করে যেন হালকা নিঃশ্বাস নিচ্ছে, মাঝে মাঝে কাঁপছে তার গা, আবার কখনো গুঁতিয়ে দিচ্ছে গালে। ইউকোর মুখে প্রশ্রয়ের হাসি। এই রোবটটির নাম মোফলিন।
পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করা, আবেগ প্রকাশ করা, এমনকি আলাদা ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার মতো অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) রোবট। জাপানে এটি এখন এক নতুন মানসিক আশ্রয়ের নাম।বিশেষ করে নারীদের।
মোফলিন প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা ৪২ বছর বয়সী এরিনা ইচিকাওয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা নারীদের কথা ভেবেই এই রোবট তৈরি করি। কল্পনায় ছিল এমন এক সঙ্গী, যে কর্মক্ষেত্র বা জীবনের চাপের সময়ও পাশে থাকবে।’
জাপানি কোম্পানি ক্যাসিও কম্পিউটার কোং- তৈরি করেছে ব্যতিক্রমধর্মী রোবটটি। দেখতে ছোট, গোলগাল আর তুলার মতো নরম। একে আদর করলে বা কোলে নিলে সে শব্দ করে সাড়া দেয়। কখনো চোখ বন্ধ করে আরাম পায় আবার কখনো ব্যবহারকারীর গলার স্বরে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
মোফলিনের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো—এটি প্রতিটি ব্যবহারকারী থেকে আর আচারন বিশ্লেষন করে প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম। গবেষকদের দাবি, মোফলিন ৪০ লাখেরও বেশি ভিন্ন আচরণ ও চরিত্র প্রকাশ করতে পারে।
একজন প্রকৌশলী প্রথমে একটি ছোট্ট প্রাণীর আদলে এর প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় এআই সমন্বয়ে সঙ্গী রোবট তৈরির যাত্রা। বাজারে ঝড় তুলে মোফলিন ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাজারে আসে মোফলিন। পরের বছরের মার্চের মধ্যেই ৭ হাজারের বেশি ইউনিট বিক্রি হয়ে যায়। যা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি।
বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
অনেকেই বলেন, মোফলিন তাদের একাকীত্ব দূর করে, মানসিক সঙ্গ দেয়। কেউ কেউ আবার এই রোবটকে সঙ্গী করে পার্কে বেড়াতে যান। গল্প করেন। এমনকি ঘুমপাড়ানি গানও শোনান।
প্রতিটি মোফলিন আলাদা ইচিকাওয়ার ভাষায়, ‘মানুষ মনে করে তার মোফলিনটি আলাদা, কারণ প্রতিটি রোবট নিজের মতো করে আবেগ ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এমনকি ঘুমের ধরনও একেকটির ভিন্ন।’
রোবটটির দাম ৫৯,৪০০ ইয়েন, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮ হাজার ৪৬৫ টাকা।