নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। এই বিজয়ের পর তাকে নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে যেমন প্রশংসা করছেন ট্রাম্পপন্থী বিশিষ্টজনেরা, অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণে বিদ্ধ করেছেন।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের সাবেক উপস্থাপক ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত টাকার কার্লসন এবং রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য মারজোরি টেইলর গ্রিন মামদানির প্রচারণার প্রশংসা করেছেন।
টাকার কার্লসন তার পডকাস্ট ‘দ্য টাকার কার্লসন শো’—তে বলেন, ‘এই লোকটিই ছিল একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নিউইয়র্ক সিটি মেয়রদের বিতর্কে বলেছিলেন তিনি নিউইয়র্ক সিটিতেই মনোযোগ দিতে চান।’
কার্লসন আরও বলেন, ‘সব প্রার্থীকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—“আপনি যদি অন্য কোনো দেশে যেতে পারতেন, তাহলে কোথায় যেতেন? ” সবাই জবাব দিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, বেশির ভাগই বলেছিলেন তারা ইসরায়েল যেতে চান। কিন্তু মামদানি বলেছিলেন, “আমি কোথাও যাব না। আমি নিউইয়র্কেই থাকব। যদি ইহুদি ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে হয়, আমি তাদের সিনাগগে, তাদের বাড়িতে যাব। আমি এখানে থাকব, কারণ আমি নিউইয়র্ক চালানোর দায়িত্ব নিতে চাই, এটাই আমার কাজ”।’
সদস্য মারজোরি টেইলর গ্রিনও মামদানির ওই উত্তরের প্রশংসা করেন। যদিও তিনি জানান, মামদানির প্রস্তাবিত ‘বিনা মূল্যে বাস, বিনা মূল্যে শিশু পরিচর্যা এবং বাড়িভাড়ার ওপর স্থগিতাদেশ’—এসব নীতির তিনি বিরোধিতা করেন। কার্লসনও এতে একমত প্রকাশ করেন।
কার্লসন বলেন, ‘আমি পুরোপুরি তার পরিকল্পনার বিরোধী। আমি মনে করি না যে, এটা কার্যকর হবে। কিন্তু অন্তত সে অর্থনীতি নিয়ে কথা বলছে। বাকি সবাই শুধু বিদেশনীতি নিয়ে ব্যস্ত। অর্থনীতি, দেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলা এত কঠিন কেন?’
এদিকে নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো মঙ্গলবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেন। এর মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার পথে এগিয়ে গেলেন মামদানি।
বিজয়ের পর মামদানি তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ রাতে আমরা ইতিহাস গড়েছি। আমরা জিতেছি কারণ নিউইয়র্কবাসীরা এমন একটি শহরের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যেখানে তারা বাঁচতে পারবে, কেবল কষ্ট করেই দিন কাটাতে হবে না। যারা রাতে শ্রম দেয়, তারাও দিনের আলোয় সেই শ্রমের ফল ভোগ করতে পারবে, কঠোর পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পাবে।’
মামদানি বলেন, তিনি মেয়র হলে শক্তিশালী মেয়রের পদ ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরোধিতা করবেন এবং নিউইয়র্ককে ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলবেন, এমন একটি দল যারা বিনা দ্বিধায় সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করে।’
অন্যদিকে ট্রাম্প মামদানিকে ‘শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে কটাক্ষ করেন। ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ লেখেন, ‘অবশেষে সেটা হয়ে গেল। ডেমোক্র্যাটরা সীমা পার করল। জোহরান মামদানি, এক শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জিতে এখন মেয়র হওয়ার পথে। আমাদের অতীতে অনেক বামপন্থী ছিল, কিন্তু এবার এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। ওর চেহারা খারাপ, গলার স্বর বিরক্তিকর, খুব একটা বুদ্ধিমানও না।’