যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
গত ৪ জুলাই হঠাৎ শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে মধ্য টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। উদ্ধারকর্মীরা এখনো কাদামাটির স্তূপ, ভাঙা ঘরবাড়ি এবং নদীর পাড়ে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে খুঁজে চলেছেন।
কের কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লেইথা জানিয়েছেন, অঞ্চলটি ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড অ্যালি’ নামে পরিচিত হওয়ায় এখানে বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই কাউন্টিতে মৃতের সংখ্যা ৯৫ জন। যাদের মধ্যে ৩৬ জন শিশু রয়েছে। বিশেষ করে গুয়াদালুপ নদীর তীর ভেঙে পড়ার সময় একটি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের ২৭ জন কিশোরী এবং বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর নিখোঁজ হন।
শেরিফ লেইথা বলেন, এখনো পর্যন্ত ক্যাম্প মিস্টিকের পাঁচজন ক্যাম্পার ও একজন কাউন্সিলর নিখোঁজ রয়েছে।তিনি বলেন, প্রায় দুই হাজারেরও বেশি উদ্ধারকর্মী, পুলিশ, ও বিশেষজ্ঞ এই উদ্ধারকাজে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত আছেন। তবে কাদা, ধ্বংসাবশেষ এবং বিপজ্জনক অবস্থার কারণে উদ্ধারকাজ জটিল হয়ে পড়েছে।
টেক্সাস গেম ওয়ার্ডেনদের মুখপাত্র বেন বেকার জানান, হেলিকপ্টার, ড্রোন, এমনকি প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রবেশ খুবই বিপজ্জনক।
এ দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি তহবিল হ্রাসের কারণে বন্যা সতর্কতা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়ার গতি নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে শেরিফ লেইথা বলেন, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি। এখন নিখোঁজদের খুঁজে বের করা এবং পরিবারগুলোরর সাথে তাদের পুনর্মিলিত করার কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
কেরভিল শহরের পুলিশ অফিসার জোনাথন ল্যাম্ব জানান, শুক্রবার ভোরে আমরা মানুষকে ঘরে ঘরে গিয়ে জাগিয়ে তুলি। জানালা ভেঙে অনেককে বের করে আনি। এটি আরও ভয়াবহ হতে পারত। তবে সাহসী উদ্ধারকারীরা অনেক প্রাণ রক্ষা করেছেন।
জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডাব্লিউ) মধ্য টেক্সাসের পার্বত্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। যা উদ্ধারকাজকে আরও ব্যহত করতে পারে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী নিউ মেক্সিকোর রুইডোসো শহরে আকস্মিক বন্যায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে নদীর পানি বেড়ে রেকর্ড ২০ ফুট (প্রায় ৬ মিটার) পর্যন্ত পৌঁছায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প শুক্রবার টেক্সাস সফরে যাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সারা দেশ থেকে প্রচুর হেলিকপ্টার এনেছি। পেশাদার দলগুলো অসাধারণভাবে কাজ করেছে এবং অনেক মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেছে।’
ক্লাইমেট সেন্ট্রালু-এর আবহাওয়া বিশ্লেষক শেল উইঙ্কলে বলেছেন, এই বিপর্যয়ের জন্য ভূগোল ও প্রচণ্ড খরাই মূলত দায়ী। টেক্সাসের মধ্যাঞ্চলে অনেক আগে থেকেই উচ্চ তাপমাত্রা এবং চরম খরা অবস্থা বিরাজ করছিল।