English

27 C
Dhaka
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫
- Advertisement -

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ প্রতারণায় কয়েক কোটি রুপি খুইয়েছেন নারী

- Advertisements -
অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে, যার জন্য শেষ পর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ রুপি খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গিয়েছে।
Advertisements

গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন।

এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি করে ফাঁদে ফেলে। এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি অর্থ ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, ‘এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম।’ যতক্ষণে ওই ফোন কল বন্ধ হয়, তত দিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সব সম্পত্তিও খুইয়েছেন। কিন্তু তিনি একা নন।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল অ্যারেস্ট জালিয়াতিতে কোটি কোটি রুপি খুইয়েছে বহু ভারতীয়। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নথিভুক্ত হওয়া মামলার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে এক লাখ ২৩ হাজারে পৌঁছেছে।

সাইবার জালিয়াতির সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে সরকারকে সংবাদপত্রে পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে, রেডিও ও টিভিতে এই বিষয়ে প্রচার করতে হয়েছে এবং এমনকি জনসাধারণকে নিজে সতর্ক করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জাতীয় জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত প্রায় চার হাজার স্কাইপ আইডি ও আট হাজার তিন শয়েরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে।

অঞ্জলি গত এক বছর ধরে থানা ও আদালতের চক্কর ঘুরছেন।

এমনকি তার খোয়ানো অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো সূত্র খুঁজে পেতে এবং সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছেও আবেদন জানিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ, দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার দ্রুত অগ্রগতি হলেও অপরাধ দমনের প্রস্তুতি পিছিয়ে রয়েছে। ক্রমবর্ধমান সাইবার জালিয়াতি, ব্যাংকগুলোর দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও খোয়ানো অর্থ ফেরত পেতে সমস্যা সেটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সব শ্রেণির মানুষকে এই প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে।

অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ব্যাংকের দ্বারস্থ
খোয়ানো অর্থের যেকোনো সূত্র খুঁজে পেতে দেশের বড় বড় ব্যাংকগুলোর প্রতিটা স্তরে সাহায্য চেয়েও সুরাহা পাননি অঞ্জলি। তিনি বিবিসিকে জানান, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আতঙ্কিত অবস্থায় তার এইচডিএফসি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গিয়েছিলেন। সেই সময় ভিডিও কলে তার ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল ওই প্রতারকরা। ওই দিনই তাদের দুই কোটি ৮০ লাখ রুপি ট্রান্সফার করেন তিনি। পরের দিন আরো তিন কোটি রুপি পাঠান।

তার অভিযোগ, এত বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন সত্ত্বেও ওই ব্যাংক কোনো রকম বিপদের সংকেত শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং অস্বাভাবিক অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কোনো রকম সতর্কতাও জারি করা হয়নি। যদিও অঙ্কটা তার স্বাভাবিক লেনদেনের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি ছিল।

অঞ্জলি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট থেকে এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও কেন ব্যাংকের রিলেশনশিপ ম্যানেজারের কাছ থেকে কোনো কল আসেনি? কেন ব্যাংকের পক্ষ থেকে এত বড় অঙ্কের অর্থ তার অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হলেও সে বিষয়ে সচেতন করা হয়নি।

এসব বিষয়ে ই-মেইলে এইচডিএফসি ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’। সেখানে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে, জালিয়াতির বিষয়টা দুই থেকে তিন দিন পর ব্যাংককে জানানো হয়েছিল। উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাহকের নির্দেশেই লেনদেন অনুমোদন করা হয়। তাই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা যাবে না। এই ই-মেইল বিবিসিও দেখেছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো বড় স্বস্তি পাননি অঞ্জলি। তিনি প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ রুপির মধ্যে মাত্র এক কোটি রুপি উদ্ধার করতে পেরেছেন। আইনজীবী জানিয়েছেন, একটা দীর্ঘ আইনি লড়াই শুরু হতে চলেছে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/jpcd
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন