প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত ‘গ্লোবাল প্লাস্টিকস চুক্তির’ খসড়া প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের প্রায় ১০০টি সদস্য দেশ। চুক্তিটিকে ‘দুর্বল’ ও ‘অপর্যাপ্ত’ মনে করায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে এই চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিলো। প্লাস্টিক উৎপাদন কমানোর জন্য একটি সিদ্ধান্তমূলক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা চুক্তিটির মূল বিষয় ছিল। বিশেষ করে সামুদ্রিক দূষণ বন্ধে বিশ্বের প্রথম আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন দলিল হওয়ার কথা ছিল এটির।
অন্যদিকে, জুরিস্ট নিউজের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি আলোচনাকারী কমিটির (আইএনসি) চেয়ারম্যান লুইস ভায়াস ভালদিভিয়েসো সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চূড়ান্ত বৈঠকে জাতিসংঘের ১৮৪ সদস্যদেশের কাছে খসড়াটি উপস্থাপন করেন। চূড়ান্ত বৈঠকে বেশ কয়েকটি দেশ চুক্তি নিয়ে কড়া মন্তব্য করে।
দেশগুলোর চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করার কারণ হলো, এতে প্লাস্টিক উৎপাদনের সর্বোচ্চ সীমা এবং পণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রস্তাব ছিলো না।
তিন বছর ধরে আলোচনার পরও ‘প্লাস্টিক দূষণ’ শব্দের আইনি সংজ্ঞা ও নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে, প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করা হবে নাকি উন্নত পণ্যের ডিজাইন বা পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে, এ নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জোর মতবিরোধ দেখা গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা আমাদের হতাশা প্রকাশ করছি যে, বর্তমান অবস্থায় এই প্রস্তাবিত খসড়া গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সামনে যে জরুরি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবিলায় এটি ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করে না।
চুক্তির খসড়াটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে দুটি শিবিরে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সমমনা দল; যেখানে সৌদি আরব, রাশিয়া, ইরান, মরক্কোর মতো তেল ও প্লাস্টিক উৎপাদনকারী দেশ রয়েছে। তারা প্লাস্টিক উৎপাদনে সীমা নির্ধারণে সম্মত নয়।
দেশগুলো বলছে, চুক্তিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশসম্মত ও সঠিক ব্যবস্থাপনা উৎসাহিত করা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূষণ কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিলো। তাদের যুক্তি, প্লাস্টিক হলো টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি মৌলিক উপাদান।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের কর্মকর্তা এরিন সিমন বলেন, যদি আমরা এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে জেনেভা থেকে হয়তো খালি হাতে ফিরবো অথবা একটি দুর্বল চুক্তি নিয়ে ফিরবো। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠদের তাদের মতামত প্রকাশ করার, একটি পথ বেছে নেওয়ার এবং দূষণের পরিবর্তে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়ার সময় এসেছে।