গত বছরের জুলাইয়ে যখন চতুর্থবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কেপি শর্মা অলি, তখন তার বয়স ৭৩। কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফায়েড মার্কসিস্ট–লেনিনিস্ট) বা সিপিএন–ইউএমএল-এর এই অভিজ্ঞ নেতা জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত স্থলবেষ্টিত দেশ নেপালের জন্য তিনি তখন আশা জাগানো নেতৃত্ব ছিলেন।
কিশোর বয়স থেকেই অলির রাজনৈতিক পথচলা শুরু। রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে তাকে ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে দীর্ঘ ১৪ বছর কারাভোগ করতে হয়। এই কারাবাসই তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জনমানসে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিপ্লবীর ভাবমূর্তি তৈরি করে।
১৯৫২ সালে পূর্ব নেপালে জন্ম নেওয়া অলির শৈশব ছিল দুর্দশাপূর্ণ। মাত্র চার বছর বয়সে গুটি বসন্তে তার মা মারা যান। ভয়াবহ বন্যায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পরিবারকে অন্যত্র চলে যেতে হয়। শৈশবের এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা তাকে দাদাবাড়িতে বড় হতে বাধ্য করে।
অলি তরুণ বয়সে কমিউনিস্ট আদর্শে দীক্ষিত হন এবং সিপিএন–ইউএমএল-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক জোট গঠনে দক্ষতা দেখিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। রাজনীতির নানা পর্যায়ে তিনি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে ধাপে ধাপে দেশের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছে দেয়।
অলি প্রথমবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন ২০১৫ সালে। সে সময় দেশটি ভারতের সীমান্ত অবরোধের মুখে পড়ে, যার ফলে কয়েক মাস ধরে জ্বালানি ও ওষুধের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। সেই কঠিন সময়ে অলি নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, অলি তুলনামূলকভাবে চীনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদেই তিনি ভারতের প্রতি কঠোর অবস্থান নেন। জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে তিনি নেপালের মানচিত্রে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন বিতর্কিত ভূখণ্ড যুক্ত করেন, যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
জেন-জির ব্যাপক আন্দোলনের মুখে এবার পদত্যাগ করে দুবাই চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন এই প্রবীণ নেতা।