পাকিস্তানের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও গোপন কসাইখানায় অবাধে মিলছে গাধার মাংস। বিভিন্ন অভিযান চালিয়েও গাধার মাংসের সরবরাহ বন্ধ করতে পারছে না দেশটির কর্তৃপক্ষ।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী ইসলামাবাদের টারনোল এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ২৫ মণ গাধার মাংস জব্দ করা হয়। সহকারী খাদ্য নিরাপত্তা অফিসারের তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামাবাদ পুলিশ ওই রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করে।
এর আগে গত রোববার একটি গোপন কসাইখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি গাধা ও ১০০০ কেজি গাধার মাংস জব্দ করেছে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ।
জিও নিউজ জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই মাংস বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খবরে বলা হয়, ইতোমধ্যে ওই ঘটনায় জড়িত একজন বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে খাদ্য নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় যারা গাধার মাংস কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনায় বাড়তি অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গাধার মাংস উদ্ধারের ঘটনা দেশটির নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, পরিস্থিতি এমন হলে আমাদের প্লেটে আসার আগে কিভাবে বুঝবো এটা গাধা না গরুর মাংস?
পাকিস্তান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামিক দেশ। আর ইসলামে গাধার মাংস খাওয়া হারাম। এছাড়াও যেসব গাধা কোন রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া রেস্তোরাঁগুলোতে গরুর মাংস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এতে বিভিন্ন মরণব্যধি ও রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা থেকে যায়।
পাকিস্তানে কেন বাড়ছে গাধার সংখ্যা?
পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত জুন মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে গাধার সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৯ হাজার। বর্তমানে গাধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ ৪৭ হাজার, যা আগের বছর ছিল ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার।
দেশটিতে গাধার সংখ্যা বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে চীনের উচ্চ চাহিদা। সেখানে গাধার মাংস বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয় এবং গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ই-জিয়াও। পূর্বে রপ্তানি প্রক্রিয়ার নানা জটিলতায় গাধার চামড়া ও মাংসের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলেও এখন প্রয়োজনীয় প্রটোকল সম্পন্ন হওয়ায় সেই প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কেটে গেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণী অধিকার সংগঠন ও পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ই-জিয়াও তৈরির জন্য চীনের ব্যাপক চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাধা জবাই বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ‘দ্য ডাংকি স্যাংচুয়ারি’ জানায়, ই-জিয়াও শিল্পে বছরে গড়ে প্রায় ৫৯ লাখ গাধার চামড়া প্রয়োজন হয়, যা বিশ্বের গাধা জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।