চরম জনপ্রিয়তা সংকটে থাকা অবস্থায় নিজের বেতন দ্বিগুণ করায় নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে তার মাসিক বেতন হবে ১০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ টাকার সমান। খবর এএফপি।
৬৩ বছর বয়সী বলুয়ার্তের মেয়াদ শেষ হতে এখনও এক বছর বাকি। ঠিক এই সময়েই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পেরুর জনগণের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে গ্যাং সহিংসতা ও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগে বলুয়ার্তের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।
গত মে মাসেই প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছিল, বেতন বাড়ানোর খবর “ভিত্তিহীন গুজব।” কিন্তু মাত্র দুই মাস পরই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বেতন দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিল।
অর্থমন্ত্রী রাউল পেরেজ-রেয়েস দাবি করেছেন, নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের সময় লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বেতনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, আগের বেতন অনুযায়ী বলুয়ার্তে ছিলেন তালিকার ১১ নম্বরে—শুধু বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়ে কিছুটা বেশি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে ভয়াবহ বার্তা বহন করে। অর্থনীতিবিদ হোর্হে গনসালেস ইসকিয়ের্দো এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘জনগণের কাছে যখন তার জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায়, তখন এটি ঘোষণা দেওয়ার সবচেয়ে খারাপ সময়।’
সাবেক অর্থমন্ত্রী লুইস মিগুয়েল কাস্তিয়া বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আরও দৃঢ় করবে।’
২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলুয়ার্তে বিক্ষোভ ও বিরোধিতার মুখে রয়েছেন। তার শাসনামলে একাধিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি তদন্তে নামছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে বলুয়ার্তের বিরুদ্ধে অন্তত ১২টি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ হচ্ছে বিলাসবহুল গয়না ও দামি ঘড়ি উপহারের তথ্য গোপন করা—যা নিয়ে ‘রোলেক্সগেট’ নামে কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তে এখন বেতন দ্বিগুণ করার সুবিধাভোগী হলেও, রাজনৈতিক মূল্য যে আরও বেশি দিতে হতে পারে—তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।