দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে ছাত্র-জনতার সমসাময়িক গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের ঘটনা ঘটেছে। তিন নিকট প্রতিবেশী দেশে এমন আন্দোলন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের বিজেপি সরকার।
এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতে ১৯৭৪ সালের পর যত আন্দোলন হয়েছে তার ইতিহাস, কার্যকারণ এবং গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবিষ্যতে ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ব্যাপক আন্দোলন’ ঠেকানোর পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতের পুলিশ গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যুরোকে (বিপিআরঅ্যান্ডডি) একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি’ তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ জন্য বিপিআরঅ্যান্ডডিকে ভারতের স্বাধীনতার পর যত আন্দোলন হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৭৪-পরবর্তী আন্দোলনগুলো নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্দোলনের কারণ ‘আর্থিক দিকসমূহ’, ‘চূড়ান্ত ফলাফল’ ও ‘পর্দার অন্তরালের কর্তা’ ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে।
গত জুলাইয়ে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিস কনফারেন্স-২০২৫’-এ এই নির্দেশনা দেন অমিত শাহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘বিপিআরঅ্যান্ডডিকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে এসব আন্দোলনের কারণ, ধরন এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করতে, যাতে পেছনের খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা যায়। যাতে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মাধ্যমে সংগঠিত বড় আন্দোলন রোধ করা সম্ভব হয়।’
শাহের নির্দেশনার পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিপিআরঅ্যান্ডডিএর একটি টিম গঠন করা হচ্ছে, যা রাজ্য পুলিশ বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবে। এর মধ্যে পুরনো মামলার নথিপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আরেক সরকারি কর্মকর্তা জানান, অমিত শাহ বিপিআরঅ্যান্ডডিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা আর্থিক তদন্ত সংস্থা যেমন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইন্ডিয়া (এফআইইউ-আইএনডি) এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেসকে (সিবিডিটি) অন্তর্ভুক্ত করে আন্দোলনের ‘আর্থিক দিক’ বিশ্লেষণ করবে।
এ ছাড়া সন্ত্রাসী অর্থায়ন নেটওয়ার্ক নির্মূল করার জন্য, ইডি, এফআইইউ-আইএনডি এবং সিবিডিটিকেও এসওপি তৈরি করতে বলা হয়েছে। তারা অজানা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক শনাক্ত, তাদের সংযোগ ও পরিকল্পনা চিহ্নিত করতে আর্থিক অনিয়ম বিশ্লেষণ করবে।
আরো জানা গেছে, অমিত শাহ বিপিআরঅ্যান্ডডিকে রাজ্য পুলিশ বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ‘পদদলিত হয়ে মৃত্যু ঘটানোর’ মতো পরিকল্পনার বিষয়গুলো বোঝা যায়। এর ভিত্তিতে সমাবেশ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের এসওপি তৈরি করা হবে।
এই সূত্র আরো জানায়, অমিত শাহ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ), বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে (এনসিবি) একটি আলাদা কৌশল তৈরি করতে বলেছেন। এই এসওপি খালিস্তানের উগ্রবাদ ও পাঞ্জাবে সাধারণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রযোজ্য হবে।
এই বিষয়ে অন্য আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এমন একটি টিম গঠন করতে হবে, যারা পাঞ্জাব সংক্রান্ত বিষয়গুলোর পটভূমি ভালোভাবে জানে। যাতে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলায় ভিন্ন ধরনের কৌশল তৈরি করা যায়।’