ভারতে জেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে – এমন বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে বিতর্কের মাঝে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের একটি চিঠি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে।
নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানা থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে পাঠানো ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করেছে দিল্লি পুলিশ। এমন চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তৃণমূলে। তবে শাসকদল বিজেপি পাল্টা জবাবে বলেছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যায় না।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ কীভাবে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে বর্ণনা করছে! বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, যে ভাষায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচিত, যে ভাষায় কোটি কোটি ভারতীয় কথা বলেন এবং লেখেন, যে ভাষা ভারতের সংবিধান দ্বারা পবিত্র এবং স্বীকৃত – তাকে এখন বাংলাদেশী ভাষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে! কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশবিরোধী, অসাংবিধানিক!’
তিনি লেখেন, ‘এটি ভারতের সকল বাংলাভাষী মানুষকে অপমান করে। তারা এই ধরণের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না, যা আমাদের সকলকে হেয় ও অপমানিত করে। আমরা সকলের কাছ থেকে ভারতের বাঙালি-বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তীব্রতম প্রতিবাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যারা ভারতের বাংলাভাষী জনগণকে অপমান ও অপমান করার জন্য এই ধরণের সংবিধান-বিরোধী ভাষা ব্যবহার করছে।’
এই বক্তব্যের পর যখন বিজেপি থেকে পাল্টা জবাব আসছে, ঠিক সেই সময় ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বিতর্কে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন।
সোমবার (৪ আগস্ট) তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে’র প্রধান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই দিল্লি পুলিশের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘হিন্দি ব্যতীত অন্য ভাষার ওপর আক্রমণের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন সম্মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি।’
তিনি বলেন, ‘এটা এমন একটি ভাষার ওপর সরাসরি আক্রমণ, যে ভাষায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছিল। এই ধরনের বিবৃতি প্রকাশ অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়, এই ঘটনা আসলে একটি জমানার অন্ধকারাচ্ছন্ন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যারা ধারাবাহিকভাবে দেশের বৈচিত্রকে খাটো করার চেষ্টা করছে।’