ভালুকের আক্রমণে রেকর্ড সংখ্যক হতাহতের ঘটনায় জাপানজুড়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাপান সরকার এখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিকারি নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। বৃহস্পতিবার দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া এবং মানুষের ওপর হামলা চালানো ভালুক দমনে শিকারি ও অন্যান্য কর্মীদের নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা হবে।
জাপানে ক্রমবর্ধমান ভালুক সমস্যা মোকাবিলায় উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের পর এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
চলতি বছর ভালুকের আক্রমণে জাপানে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। ২০০০ সাল থেকে জাপানে ভালুকের হামলার ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়। চলতি বছর সেই হিসেবে ভালুকের হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে হোক্কাইডোতে একজন সংবাদপত্র বিতরণকারী এবং ইওয়াতেতে নিজের বাগানে পাওয়া ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি রয়েছেন। ভালুককে এখন সুপারমার্কেট, হাইস্কুল এবং এমনকি লোকজনের দৈনন্দিন চলাচলের পথেও দেখা যাচ্ছে।
জাপান সরকার এই ভালুক সমস্যাকে জননিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ভালুক দমনে চূড়ান্ত পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে। সরকার পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে রাইফেল দিয়ে ভালুককে গুলি করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
বিশেষ করে উত্তর জাপানের পাহাড়-ঘেরা আকিতা প্রিফেকচারে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানেই সর্বোচ্চ সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আকিতার গভর্নর কেন্তা সুজুকি সাহায্যের জন্য জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে বর্তমান আইন অনুসারে, সেনারা ভালুককে গুলি করতে না পারলেও তারা শিকারিদের ফাঁদ পাতা এবং মৃত ভালুক পরিবহণে সহায়তা করবে। গভর্নর সুজুকি জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে কর্মরত লোকজন ভালুক মোকাবিলা করতে করতে ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েছেন।
জাপানে শিকারি সম্প্রদায়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের সংখ্যা কমছে। একসময় ভালুকের পশম ও পিত্তের চাহিদা থাকলেও এখন শিকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় ভালুকের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিচ নাট (ভালুকের প্রধান খাদ্য) এর মতো খাবারের অভাব দেখা দেওয়ায় ক্ষুধার্ত ভালুকেরা খাবারের সন্ধানে জনবসতির দিকে আসছে। গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় জনশূন্য বসতিগুলোও ভালুকের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র তৈরি করছে।

