যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের মালিকানা ও পরিচালনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তির ফলে দেশটিতে টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—এই পরিবর্তনে টিকটক কি আরও নিরাপদ হবে, নাকি ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারাবে?
টিকটকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবহারকারী সংখ্যা ১৭ কোটিরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্ল্যাটফর্মটির ‘ফর ইউ’ পেজ, যা টিকটকের শক্তিশালী রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যবহারকারীর আচরণ, পছন্দ ও দেখার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এই অ্যালগরিদম কনটেন্ট নির্বাচন ও উপস্থাপন করে।
নতুন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের অ্যালগরিদম পরিচালনা ও লাইসেন্সিংয়ের দায়িত্ব পাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল। নতুন কাঠামোয় এই অ্যালগরিদম মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষিত হবে, ফলে বৈশ্বিক তথ্য প্রবাহ কমে আসবে। এখানেই তৈরি হচ্ছে বড় প্রশ্ন।
প্রযুক্তি সাংবাদিক উইল গায়াট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের টিকটক আন্তর্জাতিক সংস্করণের মতো দ্রুত নতুন ফিচার ও আপডেট পাবে কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি নতুন ফিচার যুক্ত হতে দেরি হয়, তাহলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক কোকিল জাইদকা মনে করেন, টিকটকের জনপ্রিয়তার মূল উপাদান—ছোট ভিডিও ও শপিং সুবিধা—অবশ্যই থাকবে। তবে অ্যালগরিদম যদি সীমিত ডেটার ওপর নির্ভর করে কাজ করে, তাহলে ব্যক্তিগতকরণে ধীরগতি আসতে পারে। এতে ভাইরাল ট্রেন্ড শনাক্ত করতেও সময় বেশি লাগতে পারে।
নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে ওরাকল, সিলভার লেক এবং আবুধাবিভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল এমজিএক্স। বিশ্লেষকদের মতে, এসব বিনিয়োগকারীর প্রভাবের কারণে কনটেন্ট নীতিতে আরও সংযম ও নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক ম্যাট নাভারার বলেন, আসল প্রশ্ন ব্যবহারকারী সংখ্যা কমবে কি না—তা নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো, টিকটক কি আগের মতোই ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক ও সাহসী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে, নাকি এটি আরও ভদ্র ও নিয়ন্ত্রিত এক মাধ্যম হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। এই অধ্যায় নিরাপত্তা জোরদার করলেও, তার বিনিময়ে প্ল্যাটফর্মটির স্বাতন্ত্র্য ও উদ্ভাবনী চরিত্র কতটা বদলে যায়—সেটিই এখন দেখার বিষয়।
