যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, অনেকের হৃদযন্ত্র হয়তো তাদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি ‘বুড়ো’ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদযন্ত্রের বয়স প্রকৃত বয়সের তুলনায় বেশ কয়েক বছর বেশি।
এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে এবং নিজ নিজ হৃদ্রোগ ঝুঁকি সহজভাবে বোঝাতে গবেষকরা তৈরি করেছেন একটি অনলাইন টুল—PREVENT Risk Age Calculator। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে।
এই টুলটি ব্যবহারকারীর রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওজন-দৈহিক উচ্চতার অনুপাত (BMI), ওষুধ গ্রহণ, ধূমপান ও ডায়াবেটিস পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে হৃদ্রোগ বা হার্টফেল (হৃদযন্ত্র অকেজো হওয়া) হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে। এই ঝুঁকি একটি বয়স হিসেবে দেখায়, যাতে সহজে বোঝা যায় হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা তথা বয়স কোন পর্যায়ে আছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. সাদিয়া খান বলেন, জটিল তথ্যের পরিবর্তে যদি বলা যায় কারও হৃদযন্ত্রের বয়স ৬০, অথচ প্রকৃত বয়স ৫০—তবে তা অনেক স্পষ্ট বার্তা দেয় এবং চিকিৎসা সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
গবেষণায় ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী ১৪ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের কারও আগের কোনো হৃদরোগের ইতিহাস ছিল না। এতে দেখা গেছে, নারীদের গড় হার্ট এজ ছিল ৫৫.৪, যেখানে প্রকৃত বয়স ছিল ৫১.৩ বছর। পুরুষদের ক্ষেত্রে গড় হার্ট এজ ছিল ৫৬.৭, যা প্রকৃত বয়সের (৪৯.৭ বছর) চেয়ে প্রায় ৭ বছর বেশি।
ড. খান জানান, হার্ট এজ যদি প্রকৃত বয়সের চেয়ে ৫ বছর বা তার বেশি হয়, তাহলে তা উদ্বেগের বিষয়।
গবেষক দল আশা করছে, এই টুল ব্যবহার করে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ে হৃদ্রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে আরও কার্যকর আলোচনা করতে পারবেন এবং ঝুঁকি অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
তবে গবেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, ‘ঝুঁকির মান’ কীভাবে নির্ধারিত হবে, তার ওপর ফলাফল নির্ভর করে। ফলে আরও বড় পরিসরে এই টুলের ব্যবহার ও যাচাই জরুরি বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা।
এই অনলাইন টুল সাধারণ মানুষকে হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন করতে এবং ভবিষ্যৎ হৃদ্রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।