English

32.2 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
- Advertisement -

যুদ্ধজাহাজ-নৌবহরের বিনিময়ে পেপসি! ইতিহাসের এক অদ্ভুত বাণিজ্যচুক্তি

- Advertisements -

যুদ্ধের উত্তাপ আর কোমল পানীয় কোকা-কোলার সঙ্গে পেপসির প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলেমিশে তৈরি করেছিল ইতিহাসের অন্যতম অদ্ভুত বাণিজ্যচুক্তি। ১৯৮৯ সালে মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পেপসিকো সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এমন এক চুক্তি করে, যাতে পেপসি কোমল পানীয়ের বদলে তারা পায় এক ঝাঁক যুদ্ধজাহাজ, এমনকি ১৭টি সাবমেরিনও!

তৎকালীন মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি জানিয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে পেপসি যে নৌবহর পেয়েছে তা ভারতকে পেছনে ফেলে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম নৌবাহিনীতে পরিণত করেছিল কম্পানিটিকে।

এই গল্পের শুরু আরো আগে। ১৯৫৯ সালে মস্কোয় আয়োজিত আমেরিকান ন্যাশনাল এক্সিবিশনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের হাত ধরে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ প্রথমবার হাতে নেন এক গ্লাস পেপসি।

সেদিন পেপসির স্টলে দাঁড়িয়ে পুঁজিবাদ ভালো না কমিউনিস্ট মতবাদ উত্তম তা নিয়ে লড়াইয়ে নামেন এই দুই নেতা। ‘কিচেন ডিবেট’ নামে খ্যাত সেই বিতর্কের গরমাগরম পরিবেশে পেপসির এক চুমুক হয়ে ওঠে শীতল যুদ্ধের রাজনীতির ভিন্ন স্বাদ।

 

পেপসির আন্তর্জাতিক বিভাগের কর্তা ডোনাল্ড কেন্ডাল বিশ্বাস করতেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যবসা করা কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে তখনকার সমস্যাটা ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে রুবলের তেমন কোনো মূল্য ছিল না। সমাধান এলো বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে।

 

১৯৭২ সালে সোভিয়েত বাজারে প্রবেশ করা প্রথম মার্কিন সফট ড্রিংক কম্পানি হয়ে ওঠে পেপসি কোলা। কোমল পানীয়ের বিনিময়ে সোভিয়েত মুদ্রা রুবল না নিয়ে পেপসি পায় যুক্তরাষ্ট্রে স্টোলিচনায়া ভদকা বিক্রির একচেটিয়া অধিকার। এই চুক্তির কারণে দীর্ঘ এক যুগ ধরে পেপসির প্রতিদ্বন্দ্বী কোকা-কোলা সোভিয়েত ইউনিয়নে ঢুকতেই পারেনি।

আশির দশকে মস্কোতে ৭৩টি কিয়স্কে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার বোতল পেপসি বিক্রি হতো। মাইকেল জ্যাকসনের বিজ্ঞাপন ভেসে যেত টেলিভিশনে। গড়ে বছরে একশ কোটি বোতল পেপসি পান করত সোভিয়েতরা।

কিন্তু শীতল যুদ্ধ ও আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ধীরেই জনপ্রিয়তা হারায় ভদকা। এতে বিনিময় হিসেবে নতুন কিছু খুঁজতে থাকে পেপসি। তখনই সোভিয়েতের পক্ষ থেকে আসে এই অদ্ভুত চুক্তি।

 

১৯৮৯ সালে এক যৌথ চুক্তিতে পেপসি পায় দু’টি নতুন সোভিয়েত তেল ট্যাঙ্কার, ১৭টি সাবমেরিন, একটি ক্রুজার, একটি ফ্রিগেট আর একটি ডেস্ট্রয়ার। যদিও এগুলো ব্যবহার উপযোগী ছিল না তবুও এগুলো নিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম নৌবাহিনী বনে গিয়েছিল পেপসি। পরে অবশ্য এগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে নরওয়ের এক কম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সে সময় পেপসির কর্ণধার কেন্ডাল কটাক্ষ করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কোক্রফটকে বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাদের চেয়ে দ্রুত সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিরস্ত্র করছি।’

১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের নতুন চুক্তিও হয়। এর আওতায় নতুন তেলবাহী জাহাজ, বাণিজ্যিক ট্যাংকার আর এমনকি মস্কোয় পিজা হাট চালু করার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ে এই বহুবিলিয়ন ডলারের চুক্তি। শূন্য থেকে নতুন বাজারে ঢুকে কোকা-কোলা দ্রুত দখল নেয় রাশিয়ান বাজারের, পেছনে পড়ে যায় পেপসি।

পরে ইন্টারনেটে ‘পেপসি নেভি’ নিয়ে নানা কাহিনি ছড়ালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে কোনোদিনই পেপসির নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ বা নৌবহর ছিল না। তারা কেবল মধ্যস্থতাকারী ছিল। জাহাজগুলো দ্রুতই বিক্রি করে দেওয়া হয় স্ক্র্যাপ হিসেবে।

ইতিহাসবিদ ক্রিস্টি আয়রনসাইড বলেন, ‘পেপসি হঠাৎ করে নৌবাহিনী বানিয়ে ফেলেছিল—এমনটা সত্য নয়। এগুলো ছিল স্রেফ মরচেপড়া, অকেজো জাহাজ।’

তবুও, শীতল যুদ্ধের সময়কার এই অদ্ভুত লেনদেন এখনো ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে ‘পেপসি নেভি’ নামে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/2kns
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন