English

34 C
Dhaka
শনিবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
- Advertisement -

যেভাবে ট্রাম্পের ‘দুর্বল জায়গায়’ আঘাত করল চীন

- Advertisements -

এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুর্বল জায়গায় আঘাত করল চীন। দেশটি নিজেদের দুর্লভ খনিজ রফতানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে। আর এসব পদার্থের ওপর ট্রাম্পের বিশেষ আকর্ষণ ও আগ্রহ রয়েছে।

এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনায় ঘি ঢালল চীন।

গত সপ্তাহে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে ‘২০২৫ সালের ৬২ নম্বর ঘোষণা’, যেখানে দুর্লভ খনিজ রফতানিতে নতুন করে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিদেশি প্রতিষ্ঠান যদি এমন কোনও পণ্য রফতানি করতে চায় যাতে সামান্য পরিমাণও দুর্লভ খনিজ রয়েছে, তাহলে তাদের চীনা সরকারের অনুমোদন নিতে হবে ও সেই পণ্যের ব্যবহারের উদ্দেশ্যও জানাতে হবে।

এই পদক্ষেপে কার্যত বিশ্ববাজারে দুর্লভ খনিজের সরবরাহে চীনের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হলো। একইসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চীন যেন মনে করিয়ে দিল, এই খাতে তাদের কতটা প্রভাব রয়েছে।

দুর্লভ খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণে চীনের প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই খনিজগুলো স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান, সবকিছু তৈরিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দুর্লভ খনিজ হলো সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির অপরিহার্য উপাদান। উদাহরণ হিসেবে, একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে লাগে ৪০০ কিলোগ্রামেরও বেশি দুর্লভ খনিজ।

বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর তৈরিতে ব্যবহৃত চৌম্বক ধাতুর প্রায় ৭০ শতাংশই আসে চীন থেকে।

এদিকে, এ সিদ্ধান্তের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আনবেন।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, এটা চীনের বিরুদ্ধে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই নয়, এটা পুরো মুক্ত বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তারা বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার দিকে রীতিমতো ‘বাজুকা’ তাক করেছে। আমরা এটা মেনে নেব না।

অন্যদিকে চীন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করছে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যদি রফতানি লাইসেন্সের আবেদন সঠিক হয় ও বেসামরিক ব্যবহারের জন্য হয়, তাহলে তা অনুমোদিত হবে।

এরই মধ্যে দুই বৃহত্তম অর্থনীতি পরস্পরের জাহাজের ওপর নতুন বন্দর ফি আরোপ করেছে। এতে মে মাসে করা আপসচুক্তির পর যে কয়েক মাস শান্তি বিরাজ করছিল, তা আবার ভেঙে গেল।

চলতি মাসের শেষ দিকে ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকের আগে দুর্লভ খনিজে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চীন আলোচনায় এগিয়ে গেল।

অস্ট্রেলিয়ার এডিথ কাওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ক অধ্যাপক নাওইস ম্যাকডোনাহ বলেন, এই পদক্ষেপটি আমেরিকার সরবরাহব্যবস্থায় সরাসরি ধাক্কা দেবে। সময়ের দিক থেকেও এটি আমেরিকার আলোচনাপ্রক্রিয়াকে বড়ভাবে ব্যাহত করবে।

সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষক মারিনা ঝাং বলেন, চীন বহু বছর ধরে দুর্লভ খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণে বৈশ্বিক নেতৃত্ব গড়ে তুলেছে। তাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনব্যবস্থা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিকল্প উৎস গড়ে তুলতে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু তা বাস্তবায়নে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি। অস্ট্রেলিয়াকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে দেখা হলেও তাদের উৎপাদনব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল ও ব্যয়বহুল বলে জানিয়েছেন ঝাং।

তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা একযোগে জাতীয় প্রকল্প হিসেবেও এই খাতে বিনিয়োগ করলেও চীনের সমকক্ষ হতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে।

এপ্রিল মাসে বেইজিং যে রফতানি নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছিল, তাতেই বৈশ্বিক সরবরাহে বড় সংকট তৈরি হয়েছিল। যদিও পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সমঝোতায় তা কিছুটা কমে আসে।

তবে চীনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্লভ খনিজ রফতানি গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হ্রাসে চীনের অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। দেশটির ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে এই খাতের অংশ ০.১ শতাংশেরও কম।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সোফিয়া কালানজাকোস বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষুদ্র হলেও কৌশলগত দিক থেকে দুর্লভ খনিজ চীনের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বেইজিংকে স্পষ্ট সুবিধা দিচ্ছে।

যদিও বেসেন্ট চীনকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিযুক্ত করেছেন, তবু আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, চীন আলোচনায় রাজি ও আমি আশাবাদী যে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা হবে।

বৃহস্পতিবার ব্ল্যাকস্টোনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন শোয়ার্জম্যানের সঙ্গে বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, উভয় পক্ষের উচিত কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন, পার্থক্যগুলো যথাযথভাবে সমাধান করা ও সম্পর্ককে স্থিতিশীল ও টেকসই পথে এগিয়ে নেওয়া।

অধ্যাপক কালানজাকোসের মতে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগে নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে। আর উপদেষ্টা নাটাশা ঝা ভাস্করের ভাষায়, দুর্লভ খনিজ রফতানি সীমিত করেই চীন এখন ওয়াশিংটনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে পেয়েছে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/oxm0
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন