English

27.9 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৭, ২০২৫
- Advertisement -

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে চাপ ট্রাম্পের, মোদির কেন ‘না’

- Advertisements -

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘হুমকি’ ও অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত।  আর তাতেই নয়াদিল্লির ওপর বেজায় চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এবার তিনি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে  কঠিন কূটনৈতিক সমীকরণ সামলাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একদিকে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মোদি ভারতকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন—যা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে একরকম অস্বস্তিকর।

তবে এখন মনে হচ্ছে, ট্রাম্প আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন না।  তিনি মোদিকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতকে রাশিয়া অথবা আমেরিকা— এক পক্ষ বেছে নিতেই হবে। আর এই চাপ সৃষ্টির জন্যই তিনি ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যার মূল কারণ ভারতের রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কেনা।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও শাস্তিমূলক শুল্ক

বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন বৃহস্পতিবার থেকে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে এবং চলতি মাসের শেষের দিকে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক বসবে, যা বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি শুল্কহারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘ভারত বিপুল পরিমাণ রাশিয়ান তেল কিনছে এবং তার অনেকটা আবার বাজারে বিক্রি করছে মোটা মুনাফায়। ওরা ইউক্রেনের মানুষের প্রাণহানির বিষয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়।’

ভারতের জবাব: শুল্ক ‘অন্যায্য’

ভারত সরকার এই শুল্ক সম্পূর্ণভাবে ‘অন্যায্য’ এবং ‘বৈষম্যমূলক’ বলে দাবি করেছে।  দিল্লির মতে, ‘ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশ এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে সার ও অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য কিনছে, তাহলে শুধু ভারতের ওপরই এমন চাপ কেন?’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের পক্ষে রাশিয়া থেকে তেল কেনা একটি পরিপূর্ণভাবে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। কারণ, রাশিয়ান তেল ভারতে আসে বড় ছাড়ে, যা ঐতিহ্যবাহী তেল সরবরাহকারী দেশগুলো দেয় না।

কেন রাশিয়ার তেল ভারতের জন্য এত জরুরি?

ভারতের ১.৪ বিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি রাশিয়ান তেলের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেলভোক্তা, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে রয়টার্স।

রাশিয়া থেকে আসা অপরিশোধিত তেল বর্তমানে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৬ শতাংশ, যা দেশটির সর্ববৃহৎ তেল সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কেন অন্যত্র থেকে তেল কিনছে না ভারত?

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই সেই তেল এশিয়ার দিকে চলে আসে—বিশেষত চীন, ভারত ও তুরস্কে। ভারত সেই তেল ছাড়ে পাচ্ছে, যা অন্য দেশগুলো দিচ্ছে না।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ সিংহ বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। ভারতের পক্ষে এটি কেবল লাভের বিষয়, কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নয়।’

ভারত তার তেলের উৎস বৈচিত্র্যময় করেছে ঠিকই, কিন্তু রাশিয়ান তেল হঠাৎ পুরোপুরি বন্ধ করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, দেশটির ৮০ শতাংশ তেলের চাহিদা আমদানির উপর নির্ভরশীল।

সীমাবদ্ধ বিকল্প

ভারত আগে ইরান ও ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কিনত। কিন্তু ট্রাম্পের চাপের ফলে সেই পথ বন্ধ হয়েছে। ফলে রাশিয়া এখন একমাত্র লাভজনক এবং সহজলভ্য উৎস।

সিংহ বলেন, ‘আমাদের হাত পেছন থেকে বাঁধা। আমাদের বাজার খুব সীমিত পরিসরে চলাফেরা করতে পারছে। ’

বিশ্ববাজারে ভারতের ভূমিকা

ভারত দাবি করেছে, তাদের রাশিয়া থেকে তেল কেনা বৈশ্বিক বাজারে দাম কম রাখতে সাহায্য করেছে। কারণ, এতে করে তারা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে না। যদি ভারত রাশিয়ার বদলে বেশি দামে তেল কিনতে শুরু করে, তাহলে আমেরিকান গ্রাহকদের ওপর তার প্রভাব পড়বে।

রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ভারতে রিফাইন করে আবার রপ্তানি করা হয়, কারণ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তাদের দেশীয় পণ্যের ওপর, অন্যত্র রিফাইনকৃত পণ্যের ওপর নয়।

২০২৩ সালে ভারত ৮৬.২৮ বিলিয়ন ডলারের পরিশোধিত তেলজাত পণ্য রপ্তানি করেছে, যা তাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারকে পরিণত করেছে।

ভারত ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহু পুরনো।  স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারত নিরপেক্ষ থাকলেও, ১৯৭০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে, কারণ আমেরিকা তখন পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছিল। সেই সময় থেকেই রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে উঠে।

বর্তমানে ভারত আমেরিকা, ফ্রান্স, ইসরাইলের কাছে থেকেও অস্ত্র কেনে। তবু এখনো রাশিয়া ভারতের শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী।  এছাড়া মোদি ও পুতিনের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ উষ্ণ, গত বছর মস্কো সফরের সময় পুতিন মোদিকে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঘোরান।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/mgrd
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন