English

28 C
Dhaka
শনিবার, জুলাই ১৯, ২০২৫
- Advertisement -

শিশু পাচারের ভয়ংকর চিত্র: গর্ভে থাকা অবস্থায়ই বিক্রির চুক্তি

- Advertisements -

ইন্দোনেশিয়ায় ভয়ংকর শিশু পাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রটি ২০২৩ সাল থেকে অন্তত ২৫টি শিশু সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাচারের আগমুহূর্তে ছয়টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পন্টিয়ানাক ও টাংগেরাং শহর থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পশ্চিম জাভা পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার পরিচালক সুরাওয়ান জানান, পাচারকৃত শিশুদের প্রথমে পন্টিয়ানাকে রাখা হতো এবং সেখানে তাদের ইমিগ্রেশন কাগজপত্র তৈরি করা হতো। এরপর সেগুলো ব্যবহার করে শিশুদের সিঙ্গাপুরে পাঠানো হতো।

পুলিশ জানায়, এই চক্রের লক্ষ্য ছিল এমন মা-বাবারা, যারা সন্তান রাখতে চাইতেন না। ফেসবুকে যোগাযোগ শুরুর পর হোয়াটসঅ্যাপের মতো ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্মে চুক্তি চূড়ান্ত করা হতো। কেউ কেউ সন্তানের গর্ভকালেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতেন। জন্মের পর প্রসব ব্যয় পরিশোধের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে সন্তান হস্তান্তর করা হতো।

চক্রটির কিছু সদস্য সন্তান বিক্রির জন্য ‘উপযুক্ত’ পরিবার খুঁজতেন, অন্যরা ভুয়া জন্মসনদ, পারিবারিক কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করতেন। মায়েদের কাছ থেকে সন্তান নেওয়ার পর ২-৩ মাস দেখাশোনা করে শিশুদের জাকার্তা ও পন্টিয়ানাকে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানেই প্রয়োজনীয় নথি তৈরি করে পাচার সম্পন্ন হতো।

গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২ জন ছেলে ও ১৩ জন মেয়ে শিশু বিক্রি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিম জাভার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। প্রতিটি শিশুর মূল্য নির্ধারিত হতো অঞ্চল ও শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে—জাভায় ১১ থেকে ১৫ মিলিয়ন রুপিয়া এবং বালিতে ২০ থেকে ২৬ মিলিয়ন রুপিয়া পর্যন্ত।

পুলিশ জানায়, তাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে সিঙ্গাপুরে যারা এসব শিশু গ্রহণ করেছে, তাদের শনাক্ত করা। অধিকাংশ শিশুর জাতীয়তা পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।

সুরাওয়ান জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের মা-বাবা সম্মতিতে বিক্রি করেছেন, তবে কেউ কেউ পাচারকারীদের কাছ থেকে চুক্তির অর্থ না পাওয়ায় পরে অপহরণের অভিযোগ করেছেন। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে অভিভাবকরা ইচ্ছায় সন্তান বিক্রি করেছেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও শিশু সুরক্ষা আইন ও মানব পাচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইন্দোনেশিয়া পুলিশ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল ও সিঙ্গাপুর পুলিশ-এর সহায়তায় পাচারকাজে জড়িত অন্যান্য সদস্য ও ক্রেতাদের শনাক্তে কাজ করছে। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার শিশু সুরক্ষা কমিশন (KPAI)-এর কমিশনার আই রাহমায়ান্তি জানান, এসব পাচারচক্র সমাজের অসহায়, একা নারী কিংবা ধর্ষণের শিকার নারীদের টার্গেট করে। অনেক সময় তাদের বলা হয় সন্তান বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে, পরে লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে শিশু বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, শিশু পাচার ইন্দোনেশিয়ায় বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে যেখানে ১১টি অবৈধ দত্তক গ্রহণের ঘটনা নথিভুক্ত ছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯টিতে। ২০২৪ সালেও বালি ও দেপোক থেকে একাধিক শিশু পাচারের সময় উদ্ধার করা হয়।

এই আন্তর্জাতিক পাচারচক্র শুধু ইন্দোনেশিয়ার জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্যও গভীর উদ্বেগের বিষয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা জরুরি যেন আর কোনো মা-বাবা আর্থিক দুর্বলতার কারণে এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য না হন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/cx9y
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন