ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী’ (আইডিএফ) বিশ্বের অন্যতম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গাজা ও লেবাননে পরিচালিত অভিযানগুলোর মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বাহিনীর এক সদস্য।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিহত সেনার নাম ড্যানিয়েল এদরি (২৪)। তিনি লেবানন ও গাজায় আইডিএফের সহায়ক সেনা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পরিবার জানায়, যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা—লাশের গন্ধ, দগ্ধ দেহ, মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ—তাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে তোলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তার মানসিক অবসাদ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নোভা মিউজিক ফেস্টিভালে ড্যানিয়েলের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিহত হন। সে সময় বন্ধুদের সাহায্যে ছুটে যেতে না পারায় ড্যানিয়েল নিজেকে দোষারোপ করতেন। সেই অপরাধবোধ, যুদ্ধের স্মৃতি আর মানসিক চাপ একসঙ্গে তাকে চূর্ণ করে দেয়। অবশেষে সাফেদের বিরিয়া জঙ্গলের কাছে নিজের জীবন নিজেই শেষ করেন তিনি।
ড্যানিয়েল ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। অল্প বয়সেই বাবা হারান, বড় হন মা সিগালের কাছে। গত মাসেই উদযাপন করেছিলেন ২৪তম জন্মদিন। রিজার্ভ সেনা হিসেবে ডাক পাওয়া ছিল তাঁর জন্য গর্বের বিষয়।
মা সিগাল জানান, যুদ্ধক্ষেত্রে ড্যানিয়েলের কাজ ছিল মরদেহ পরিবহন। অসংখ্যবার তিনি সেনাদের মরদেহ এক স্থান থেকে অন্যত্র নিয়ে গেছেন। একদিন বলেছিলেন, ‘মা, আমি শুধু লাশের গন্ধ পাই। চোখের সামনে শুধু মৃতদেহ।’
ড্যানিয়েলের অবস্থার অবনতি দেখে পরিবার আইডিএফের সহায়তা চায়। সেনাবাহিনী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, মাসোহারাও দেয়। তবে মানসিক অবসাদ এতটাই গভীর ছিল যে, একসময় তিনি নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলে। সেই সময়টাই ড্যানিয়েলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
মা সিগাল কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘সে আর সহ্য করতে পারছিল না। অন্তত মৃত্যুর মাধ্যমে সে এখন শান্তি ও সম্মান পাক। তার আত্মত্যাগ যেন স্বীকৃতি পায়।’
তবে ড্যানিয়েলের মৃত্যুতে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। আইডিএফ বলছে, ইসরায়েলি আইনে কেবল সক্রিয় ডিউটিতে থাকা সদস্যরা ‘শহীদ’ হিসেবে মর্যাদা পান। যেহেতু মৃত্যুর সময় ড্যানিয়েল রিজার্ভ স্ট্যাটাসে ছিলেন, তাই এই সম্মান তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সিগালের দাবি, “সে দেশের জন্য লড়েছে, মরদেহ বহন করেছে, যন্ত্রণায় দিন কেটেছে—সে শুধু সামরিক মর্যাদার দাবিদার নয়, সেটা তার প্রাপ্য।”