English

31 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

শ্রীলঙ্কায় আরো ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা জনতার জ্বালাও-পোড়াওয়ের পর নতুন করে কারফিউ জারি করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার। আইনজীবীদের একটি বড় দল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। দেশের এই অর্থনৈতিক সংকটময় মুহূর্তেও বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষায় জোর দিয়ে তাঁরা ওই অনুরোধ জানান। কিন্তু তা হয়নি।

দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত ক্ষমতাবলে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ’

দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। দুই বছরে দেশটির বৈদেশিক বিনিময় তহবিল কমেছে ৭০ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতি এখন মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত। চলছে ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহের মারাত্মক সংকট। অনেক বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যও। বিদ্যুৎ সরবরাহ দীর্ঘসময় বন্ধ রাখা হচ্ছে নিয়ম করে।

বিপর্যস্ত মানুষ গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে নেমে আসে রাস্তায়। উত্তেজিত জনতা সে সময় দুটি সামরিক বাস, একটি পুলিশের গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। ইটপাটকেল ছোড়ে পুলিশের দিকে। গ্রেপ্তার করা হয় ৫৩ বিক্ষোভকারীকে। তাঁদের মধ্যে শুক্রবার রাতে ২১ জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। অন্যদের এখনো আটকে রাখা হয়েছে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।

প্রথমে বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করা হলেও পরে তা শুক্রবার সকালে উঠিয়ে নেওয়া হয়। নজিরবিহীন ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা সামাল দিতে শুক্রবার থেকেই কঠোর আইন প্রয়োগ করা শুরু করেন রাজাপক্ষে। জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোনো পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষমতা দিয়েছেন সামরিক বাহিনীকে।

সেনারা আগে থেকেই রাস্তায় ছিল। অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে জ্বালানি স্টেশন এবং অন্যান্য স্থানে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল তারা। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তাদের উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক সময়ে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী কাজ করে পুলিশের সহায়ক ভূমিকায়। কিন্তু জরুরি অবস্থা তাদের নিজেদের তরফে কাজ করার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে।

রাজাপক্ষে বলেছেন, গণশৃঙ্খলা বজায় এবং অপরিহার্য সরবরাহ ও সেবার গতি ঠিক রাখতে জরুরি অবস্থা জারি করার প্রয়োজন ছিল।

এক মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, বর্তমান নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে অলাভজনক সংস্থা কলম্বো সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভের জ্যেষ্ঠ গবেষক ভবানি ফনসেকা জানান, প্রেসিডেন্টের জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতাকে আখ্যায়িত করে এমন নীতিমালা এখনো আরোপ করা হয়নি।

শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় দোকানপাট খুলতে দেখা যায়। ট্রাফিকও স্বাভাবিক ছিল এ সময়। কিছু টহলচৌকিতে চোখে পড়ে পুলিশের উপস্থিতিও।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া 
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চ্যাং বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কানদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভের অধিকার রয়েছে- যা গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের জন্য জরুরি। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে দেখছি, আশা করছি আগামী দিনগুলোতে সব পক্ষই সংযম দেখাবে। চোখে পড়বে অতি জরুরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং এ যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি। ’

আশঙ্কা করা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা নিজে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারে সরকার। ঋণ পরিশোধে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সাহায্য চেয়েছে দেশটি। শিগগির সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে তাদের। আপাতত দেশটি সে প্রস্তুতিই নিচ্ছে।

আইএমএফের কাছে সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি চীন ও ভারতের কাছেও নতুন করে ঋণ চেয়েছে দেশটি।

ভারতের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা 
শ্রীলঙ্কায় খাদ্য সহায়তায় ৪০ হাজার টন চাল পাঠাচ্ছে ভারত। বলা হচ্ছে, এটি সহায়তার প্রথম প্রধান ধাপ। এরই মধ্যে চাল পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে একাধিক ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শনিবার দুই সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন এ খবর।

গত মাসেই সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০০ কোটি ডলারের সহায়তা দিতে রাজি হয় ভারত। বর্তমানে যে ৪০ হাজার টন চাল সহায়তা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে, তা শ্রীলঙ্কায় চালের দাম কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিগত এক বছরে চালের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে দেশটিতে।

চাল পাঠানোর কাজে নিয়োজিত পাত্তাভি অ্যাগ্রো ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভি কৃষ্ঞা রাও বলেন, ‘দক্ষিণের বন্দরে চাল বোঝাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে দ্রুত রপ্তানির জন্য কনটেইনার বোঝাই শুরু করেছি আমরা। নৌযান বোঝাইয়ের কাজ আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে। ’

ভারতের ৪০ হাজার টন ডিজেলবাহী একটি জাহাজও শনিবার শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়েছে। জ্বালানির সংকটে দেশটির গণপরিবহন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একশ কোটি ডলার ঋণের আওতায় ভারত এ ডিজেল পাঠিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন