সমুদ্রের তলদেশ পরিষ্কার রাখতে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রাকৃতিকভাবে সহায়তা করে ‘সী কিউকাম্বার’, যাদের ‘সমুদ্রের ঝাড়ুদার’ বলা হয়। ফিলিপাইনের একদল নারী এই প্রাণীদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন সমুদ্র ও জীববৈচিত্র্যকে ভালোবেসে।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে বলিনাও নামক ছোট্ট একটি শহরে, কোমর-সমান পানির ওপরে কাঠের তৈরি একটি কুঁড়েঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন ৬১ বছর বয়সী বিধবা আওয়েং কাসি। ঘরটি আসলে একটি প্রহরীচৌকি, যেখানে বসে স্থানীয় জেলেরা পাহারা দেন সমুদ্রর্যাঞ্চ- এ চাষ করা সী কিউকাম্বারদের।
বাদামি-সবুজ রঙের দেখতে এই অদ্ভুত প্রাণীগুলো চাষ করতে তাদের লেগেছে বহু বছর।
বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, আওয়েং কাসির স্বামী প্রয়াত কা আরতেম ছিলেন বলিনাওয়ের ভিক্টরি গ্রামে মৎস্যজীবী দলের নেতা, যারা প্রায় দুই দশক আগে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে এই সী কিউকাম্বার র্যাঞ্চ (খামার) গড়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, একসময় প্রচুর সংখ্যায় পাওয়া যাওয়া এই আচার-সদৃশ প্রাণীগুলোর সংখ্যা বাড়ানো।
আজও সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন আওয়েং কাসি। স্বামীর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে, সমুদ্র ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন।
ফিলিপাইনে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ এই মোটা ও চামড়ার মতো খসখসে ত্বকের সামুদ্রিক প্রাণীগুলো সমুদ্র থেকে তুলে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এদের বলা হয় ‘বালাত’ বা ‘বালাতান’। এশিয়ায় এই প্রাণীগুলোর আহরণ প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।
সী কিউকাম্বার বা সমুদ্র শসা, তারকা মাছ ও সী আরচিনের (সমুদ্র কাঁটা) কাছাকাছি প্রজাতি। পূর্ব এশিয়ায় এগুলো খাওয়া হয় এবং চিকিৎসার উদ্দেশ্যেও ব্যবহার হয়। চীনা রান্নায় এগুলোকে একপ্রকার মূল্যবান উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশেষ করে জাপানি প্রজাতি ‘আপোস্টিকোপাস জাপোনিকাস’ নামক শুকনো সী কিউকাম্বার সবচেয়ে দামী, যা প্রতি কেজির দাম প্রায় ১ হাজার ৭৮২ ডলার (প্রায় ১ হাজার ৪০০ পাউন্ড)।
১৯৮০’র দশকে, বোলিনাও এবং পাশের দ্বীপ শহর আন্দার জেলেরা প্রতিদিন একজন ব্যক্তি গড়ে ১০০ কেজি পর্যন্ত সি কিউকাম্বার সংগ্রহ করতেন। তবে দশ বছর পর সেই পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৫ কেজিতে, আর ২০০২ সালে তা আরও নেমে গিয়ে হয় মাত্র ২.৫৫ কেজি।
ক্যাসির ঘরের আশেপাশের সাগরের পানি, যেখানে একসময় এই প্রাণীগুলো ভরে থাকত, এখন অনেকটাই শূন্য হয়ে গেছে।
ক্যাসি বলেন, ‘আমরা আহরণের পরিমাণ নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমাদের লক্ষ্য হলো এদের সংখ্যা বাড়ানো।’