নিজের মৃত্যুর ভান করে ইউরোপে পালিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের তিন সন্তানের জনক রায়ান বরগওয়ার্ট। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়ে আদালত তাকে ৮৯ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে। যে সময় ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজেছে, তার কারাদণ্ডের মেয়াদও সমান রাখা হয়েছে। খবর বিবিসির।
৪৫ বছর বয়সী বরগওয়ার্ট গত বছরের আগস্টে মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পরে তার ফোন, পরিচয়পত্র ও একটি উল্টে থাকা নৌকা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়েছিল তিনি ডুবে গেছেন। কয়েকদিন ধরে লাশ খোঁজাখুঁজি চললেও পরে জানা যায়, তিনি কানাডা হয়ে জর্জিয়ায় পালিয়েছেন। কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে পরিচিত উজবেকিস্তানের এক নারীর সঙ্গে দেখা করতেই তিনি সাবেক সোভিয়েত দেশটিতে যান।
গ্রিন লেক কাউন্টি সার্কিট কোর্টের বিচারক মার্ক স্লেট জানান, বরগওয়ার্ট উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রসিকিউটরদের প্রস্তাবিত সময়ের দ্বিগুণ অর্থাৎ ৮৯ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধারকারী দলের খরচ বাবদ তাকে ৩০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিবিএস নিউজকে বিচারক স্লেট বলেন, ‘তিনি মোট ৮৯ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করেছেন।’
দণ্ড ঘোষণার আগে আদালতে বরগওয়ার্ট বলেন, ‘সেদিন রাতে আমি যা করেছি, এবং আমার পরিবার ও বন্ধুদের যে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছি, তার জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত।’ জানা গেছে, স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি একটি জীবনবিমা করেছিলেন, বিদেশি অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছিলেন, নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন এবং ভ্যাসেকটমি পদ্ধতি পরিবর্তন করিয়েছিলেন।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেরিস লাস্পিসা বলেন, ‘নিজের স্বার্থপর ইচ্ছা পূরণের জন্য মৃত্যুর ভান করে তিনি পরিবারকে বিপর্যস্ত করেছেন। পুরো পরিকল্পনাটিই নির্ভর করেছিল সবাইকে বিশ্বাস করানোর ওপর যে তিনি লেকে মারা গেছেন।’ প্রসিকিউটরদের মতে, গত নভেম্বরে এক রুশভাষী নারী তাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়।
পরবর্তীতে বরগওয়ার্ট নিজেই একটি ভিডিও পাঠান, যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি আমার অ্যাপার্টমেন্টে আছি, নিরাপদে আছি, কোনো সমস্যা নেই।’ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হয় এবং বাধা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা হয়। এদিকে তার স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন।
বরগওয়ার্টের আইনজীবী এরিক জনসন এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘তিনি চাইলে জর্জিয়াতেই থেকে যেতে পারতেন, কারণ এই ধরনের লঘু অপরাধে তাকে প্রত্যর্পণ করা হতো না। কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব স্বীকার করতেই স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছেন।’