ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে বহুল আলোচিত ৩,২০০ কোটি রুপির মদ কেলেঙ্কারির মামলায় ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির (যুব শ্রমিক কৃষক কংগ্রেস পার্টি) সংসদ সদস্য পি ভি মিধুন রেড্ডিকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি)। রবিবার তাকে দেশটির দুর্নীতি দমন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত বিচারিক হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শনিবার রাতে প্রায় সাত ঘণ্টার দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিধুন রেড্ডিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রবিবার সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এসআইটির তদন্ত প্রতিবেদনে মিধুন রেড্ডিকে চতুর্থ আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৩৮৪, ২০১, ১২০ (বি) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।
২৮ পৃষ্ঠার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, এই কেলেঙ্কারির প্রধান পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন এমপি মিধুন রেড্ডি। এসআইটির দাবি, তিনি সরকারি নীতিতে পরিবর্তন এনে বিশেষ কিছু ব্র্যান্ড ও ডিস্টিলারিকে অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছেন এবং এর বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ কমিশন গ্রহণ করেছেন।
বিশেষ করে, অন্ধ্র প্রদেশ বেভারেজ করপোরেশনের (APBCL) এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ERP) পদ্ধতি বাতিল করে ইমেইলভিত্তিক ‘অর্ডার ফর সাপ্লাই’ (সরবরাহ আদেশ) পদ্ধতি চালু করেন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষে স্বজনপোষণ সহজ হয়। এর মধ্য দিয়ে চক্রটি সরকারি মদ দোকান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কমিশন আদায়ের পথ সুগম করে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, মিধুন রেড্ডি এপিবিসিএল-এর বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে ডি সত্য প্রসাদকে নিয়োগে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। এই কর্মকর্তা নিজের ইচ্ছামতো ব্র্যান্ড বাছাই, সরবরাহকারী বাতিল এবং ‘অর্ডার ফর সাপ্লাই’ পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে দুর্নীতিতে অংশ নেন।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর রাজ্যসভার সাবেক সদস্য ভি বিজয় সাই রেড্ডির বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই চক্রের মূল সদস্যরা অংশ নেন। সেখানে তিন বছরের মদ বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি মাসে ৫০-৬০ কোটি রুপি কমিশন আয়ের সুযোগ রয়েছে। এরপরই সরকারি মদ দোকান চালু, কমিশন আদায়ে তরুণদের নিয়ে বেসরকারি নেটওয়ার্ক গঠন এবং হাওলা ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের পরিকল্পনা নেয় তারা।
এসআইটির এক কর্মকর্তা জানান, এমপি মিধুন রেড্ডিকে শিগগিরই রাজামুন্দ্রি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হতে পারে।