আট বছর আগে ৯ জনকে খুন করা এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে জাপান। ২০২২ সালের পর এটিই দেশটিতে সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ার প্রথম ঘটনা।
বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘টুইটার কিলার’ খ্যাত তাকাহিরো শিরাইশির ২০১৭ সালের ওই সিরিয়াল খুনের ঘটনা জাপানকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইনে যেভাবে আলোচনা হয় তা নিয়ে তীব্র বিতর্কও উসকে দিয়েছিল।
সেসময় ৩০ বছরের শিরাইশি তার শিকারদের প্রলুব্ধ করে তার অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যেতেন এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যা ও দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতেন। তার শিকারদের বেশিরভাগই ছিল ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সের তরুণী।
নিখোঁজ একজনের সন্ধানে গিয়ে পুলিশ টোকিওর কাছে জামা শহরের এক অ্যাপার্টমেন্টে মানবদেহের টুকরো পাওয়ার পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে ওই সিরিয়াল খুনের ঘটনা আলোর মুখ দেখে।
শিরাইশি পরে জানান, তিনি আত্মহত্যাপ্রবণ যে ৯ জনকে হত্যা করেছেন, তাদের সঙ্গে তার টুইটারে পরিচয় হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার এখন এক্স নামে পরিচিত।
পরিচিত হওয়ার পর তিনি তাদেরকে বলেন, তিনি তাদের মৃত্যুতে সহযোগিতা করতে পারবেন। কখনো কখনো বলতেন, তিনিও তাদের সঙ্গেই আত্মহত্যা করবেন।
সেসময় তার টুইটার প্রোফাইলে লেখা ছিল, ‘আমি সেসব মানুষকে সহায়তা করতে চাই যারা খুবই কষ্টে আছে। দয়া করে, যে কোনো সময় আমাকে ডিএম (সরাসরি মেসেজ) করুন।’
পুলিশ কর্মকর্তারা তার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে কুলার ও টুলবক্সের ভেতর থেকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করেন। গণমাধ্যম সেসময় ওই অ্যাপার্টমেন্টকে অ্যাখ্যা দিয়েছিল ‘আতঙ্কের বাড়ি’ নামে।
বিচারে কৌঁসুলিরা শিরাইশির মৃত্যুদণ্ড চাইলে তার আইনজীবীরা দাবি করেন যে, তাদের মক্কেল যাদের হত্যা করেছে, তারা খুনের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন।
আইনজীবীরা শিরাইশির মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখতেও অনুরোধ করেছিলেন।
তবে পরে নিজের আইনজীবীদের ভাষ্যের বিরোধিতা করে শিরাইশি জানান, তিনি যাদের হত্যা করেছিলেন, তাদের সম্মতি নেননি।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিরাইশির রায় ঘোষণার শুনানিতে হাজারও মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সেদিন বিচারক রায়ে শিরাইশিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো টুইটারকেও নীতিমালা পরিবর্তনে বাধ্য করে। পরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিয়ম সংশোধন করে জানায়, ব্যবহারকারীরা আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতিসাধনজনিত কাজের ‘প্রচার বা উৎসাহ দিতে’ পারবেন না।