বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত অপরাধের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অভিযানে প্রায় ত্রিশ হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। মাসব্যাপী ইন্টারপোল ও ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে এই অভিযানে ১৩৪টি দেশ অংশ নেয়।
ইন্টারপোলের বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘অপারেশন থান্ডার’ নামে চলতি বছরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ৪ হাজার ৬৪০টি জীবিত বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ, প্রাণীর অঙ্গ ও অবৈধ কাঠ জব্দ করা হয়।
অভিযানে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পাচার করা হয় পাখি, সরীসৃপ, প্রাইমেট ও বিরল কীট। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ায় তিন হাজারের বেশি পাখি উদ্ধার করা হয়েছে, ব্রাজিলে এক হাজারের বেশি পাখি, লাওসে প্যাংগোলিন, থাইল্যান্ডে মিশরীয় কচ্ছপ, মালয়েশিয়ায় গিবন ও কাসকাস এবং অস্ট্রেলিয়ায় হ্যাচিং ডিম জব্দ করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণী পাচারকারীরা মূলত প্রাণীর অঙ্গ বা দ্রব্যাদি কেনা-বেচা করেন। যা সাধারণত ওষুধ, বিলাসবহুল খাদ্য বা শোভামূলক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ইন্টারপোলের মহাপরিচালক ভালডেসি উর্কুইজা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘এই অভিযান প্রমাণ করেছে বন্যপ্রাণী পাচার অন্যান্য সংগঠিত অপরাধ যেমন মাদক ও মানব পাচারের সঙ্গেও জড়িত।’
অভিযানে বন্য প্রাণীর মাংস পাচারের ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে একাধিক বড় ধরনের জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে বেলজিয়াম স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রাইমেটের বিপুল পরিমাণ মাংস জব্দ করেছে। কেনিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৪০০ কেজিরও বেশি জিরাফের মাংস উদ্ধার করে। তানজানিয়ায় উদ্ধার করা হয়েছে জেব্রা ও হরিণের মাংস ও চামড়া। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
ইন্টারপোল ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী অভিযানে এবার রেকর্ড ৫ দশমিক ৮ টন বন্য প্রাণীর মাংস জব্দ করা হয়েছে। এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে অবৈধভাবে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণী ও বনজ পণ্য শনাক্ত করা। একই সঙ্গে পরিবেশগত অপরাধে জড়িত সংগঠিত চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণীর মাংসের অবৈধ বাণিজ্য শুধু বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বের জন্যই হুমকি নয়, এটি জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
