হরিয়ানার পতৌদির বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। জমির ওপর উড়ছে একটি ড্রোন। নীচে ৩৫ বছর বয়সী নারী শর্মিলা যাদব। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ড্রোনটি পরিচালনা করছেন তিনি। শর্মিলা আগে ছিলেন গৃহিণী, এখন সার্টিফায়েড ড্রোন পাইলট। আকাশে উড়ার স্বপ্ন শর্মিলার সবসময়ই ছিল। কিন্তু কল্পনাও করেননি- মেঘের পরিবর্তে ফসলের ওপর দিয়ে কখনো উড়বেন তিনি।
চোখে চশমা, হাতে কন্ট্রোলার। বিঘার পর বিঘা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছেন দারুণ দক্ষতায়। যেই জমিতে সার-কীটনাশক ছিটাতে একসময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রম করতে হতো; তা এখন কয়েক মিনিটের কাজ। আর এ কাজ করছেন নারীরা।
পতৌদির বহু নারী কৃষকের মতো, শর্মিলাও বছরের পর বছর ধরে সূর্যের নীচে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বিনিময়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন সামন্যই। কিন্তু একটি প্রশিক্ষণ বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি। প্রশিক্ষণ থেকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহে ১৫০ একর জমিতে ড্রোন চালানোর দক্ষতা অর্জন তিনি। আর এই স্বল্প সময়ে উপার্জন হয় প্রায় ৫০ হাজার রুপি। শুধু টাকাই নয় সঙ্গে নিজের নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে। গ্রামে তার নতুন নাম ‘পাইলট দিদি’।
শর্মিলার মতো বহু নারী এভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলের সুযোগ পেয়েছেন। তারা আগামী দিনের কৃষির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। সরকারি সহায়তায় ‘ড্রোন দিদি’ প্রোগ্রাম তাদের নতুন স্বপ্ন বোনার সুযোগ করে দিয়েছে।
উল্লখ্য, দারিদ্র দূরীকরণ ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে ‘ড্রোন দিদি যোজনা’ নামে একটি স্কিম চালু করে ভারত সরকার। প্রকল্পের আওতায় নারীদের ড্রোন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের উত্সাহিত করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১৫ হাজার নারীকে ড্রোন চালানোর প্রশিক্ষণ দেয় ভারত সরকার। তারা এখন কৃষিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে ফসল পর্যবেক্ষণ, সার ও কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সমাজে তাদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে রাখতে পারছেন অসামান্য অবদান।
এখানে দু’জন
শর্মিলা যাদব (পতৌদি, হরিয়ানা)
তিনি কে: ৩৫ বছর বয়সী শর্মিলা যাদব একজন গৃহিণী। মফস্বল শহর পতৌদিতে বছরের পর বছর ঘর সামলে কেটেছে সময়। যদিও আকাশে উড়ার সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে লালন করতেন ছোটকাল থেকেই। অবাস্তব কল্পনা ভেবে কাউকে বলা হয়নি। কিন্তু সেই স্বপ্নই আজ বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে ফসলের মাঠে।
কী করেছিলেন তিনি: সরকারের ‘ড্রোন দিদি’ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি তার এলাকার প্রথম সার্টিফায়েড নারী ড্রোন পাইলট। এখন তিনি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বিস্তৃীর্ণ জমিতে সার-কীটনাশক ছিটাতে পারেন।
তিনি এটি কীভাবে করেছিলেন: ড্রোন ডেস্টিনেশন ও ইন্ডিয়ান ফার্মার্স ফার্টিলাইজার কোঅপারেটিভ লিমিটেডের (আইএফএফসিএল) একটি প্রশিক্ষণে যোগ দেন শর্মিলা। সেখানে কয়েক সপ্তাহে তিনি তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক উভয় দক্ষতা অর্জন করেন। এখন তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কৃষি-ড্রোন পরিচালনা করতে পারছেন।
প্রভাব: মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে শর্মিলা ১৫০ একরেরও বেশি জমিতে সার-কীটনাশক ছিটাতে পারেন। এতে তার আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার রুপি। তবে শর্মিলার কাছে এখন সবচেয়ে গর্বের বিষয়- সবাই এখন সম্মান করে এবং ‘পাইলট’ বলে ডাকে।
নিশা সোলাঙ্কি (হরিয়ানার প্রথম সার্টিফায়েড মহিলা ড্রোন পাইলট)
তিনি কে: হরিয়ানার একজন নারী কৃষক। নিশা সোলাঙ্কি কৃষি ড্রোন চালনায় ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) অনুমোদিত রাজ্যের প্রথম নারী।
যা করেছিলেন তিনি: নিশা সার্টিফিকেট নিয়েই থেমে থাকেননি। তিনি একজন পরামর্শদাতা ও গাইড হিসেবেও কাজ করেন। হরিয়ানা জুড়ে শত শত কৃষককে প্রশিক্ষণ দেন এবং কৃষিকাজের দক্ষতা উন্নত করতে ড্রোন ব্যবহার কর্মসূচির প্রচারে কাজ করছেন।
তিনি কীভাবে এটি করেছিলেন: আনুষ্ঠানিক ড্রোন পাইলট সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর, তিনি কীভাবে দ্রুত ও দক্ষতার সাথে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা যেতে পারে তার সরাসরি প্রদর্শনী পরিচালনা করতে শুরু করেন। প্রতিটি সেশনের সঙ্গে তার আত্মবিশ্বাস ও প্রভাব বাড়তে থাকে।
প্রভাব: নিশা এখন ৭৫০টিরও বেশি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে কৃষকদের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পানি ব্যবহার কমাতে এবং স্প্রে করার সময় বাঁচাতে সাহায্য করছে। স্থানীয় কৃষক থেকে রাজ্যব্যাপী পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়া নারী হিসেবে তার যাত্রা অনেকের জন্য পথ আলোকিত করছে।