বিমান ভ্রমণের সময় হঠাৎ কাঁপুনি বা ঝাঁকুনিকে বলা হয় টার্বুলেন্স (আকাশে বাতাসের অস্থিরতা)। এটি শুধু যাত্রীদের অস্বস্তি তৈরি করে না, বরং দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণও হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এ ঝুঁকি আরও বাড়বে।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ২০৭ জন যাত্রী ও ক্রু আহত হয়েছেন টার্বুলেন্সে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। যেমন—গত বছর এয়ার ইউরোপার একটি ফ্লাইটে ৪০ জন আহত হন, আর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এক ফ্লাইটে এক প্রবীণ যাত্রী মারা যান ও অনেকে আহত হন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক বিমান সাধারণত টার্বুলেন্স সহ্য করতে পারে। তাই ঝুঁকি থাকে মূলত যাত্রী বা কেবিন ক্রু আহত হওয়ার। এজন্য যাত্রীদের সবসময় সিটবেল্ট বাঁধা থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কয়েকটি টার্বুলেন্স হলো- কনভেক্টিভ টার্বুলেন্স: মেঘ বা বজ্রঝড়ের ভেতরের বাতাসের ওঠানামা থেকে তৈরি হয়। মাউন্টেন ওয়েভ টার্বুলেন্স: পাহাড়ি এলাকায় তৈরি হয়। ক্লিয়ার-এয়ার টার্বুলেন্স (CAT): সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি দেখা যায় না। এটি সাধারণত জেট স্ট্রিমে (উচ্চ আকাশে দ্রুত গতির বাতাসের ধারা) তৈরি হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আকাশের উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল দ্রুত গরম হচ্ছে। এর ফলে জেট স্ট্রিমের গতি ও বাতাসের ওঠানামা বেড়ে যাচ্ছে, যা টার্বুলেন্সকে আরও তীব্র করছে। ১৯৮০ থেকে ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর আটলান্টিক, উত্তর আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় টার্বুলেন্স ৬০ থেকে ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
গবেষণা বলছে, প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শীতে মাঝারি পর্যায়ের টার্বুলেন্স ৯ শতাংশ এবং গ্রীষ্মে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। আগে শীতে ঝুঁকি বেশি থাকলেও এখন গ্রীষ্ম ও শরতেও তা বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রঝড়ও বাড়ছে, যা টার্বুলেন্সের অন্যতম কারণ।
ঝুঁকি কমাতে বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায় কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্লাইট রুট এমনভাবে ঠিক করা যাতে টার্বুলেন্স বেশি হয় এমন জায়গা এড়িয়ে যাওয়া যায় এবং পূর্বাভাস আরও নিখুঁত করা যায়। কিছু এয়ারলাইন্স আগে থেকেই কেবিন সার্ভিস বন্ধ করে যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধতে উৎসাহ দিচ্ছে। একইসঙ্গে নতুন প্রযুক্তি যেমন—অনবোর্ড লাইডার ব্যবহার করে বাতাসের গতি ও ঘনত্ব মাপার চেষ্টা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টার্বুলেন্স কমাতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো। বিমান খাত বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রায় ৩.৫ শতাংশের জন্য দায়ী। এজন্য পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অগ্রগতি এখনও ধীরগতির।