ইরান মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনার অনুরোধ করেনি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক দিন আগেই দাবি করেছিলেন, তেহরান আলোচনার জন্য আগ্রহী।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা তাসনিম বলেছে, ‘আমাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বৈঠকের অনুরোধ করা হয়নি।’
এর আগে ট্রাম্প সোমবার বলেছিলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় এবং আলোচনা নির্ধারিত হয়েছে।
যদিও তিনি সময় বা স্থান উল্লেখ করেননি।
ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনা নির্ধারণ করেছি। তারা আলোচনা করতে চায়। তারা বৈঠক চায়।
কিছু একটা সমাধান করতে চায়। তারা এখন একেবারেই আলাদা, দুই সপ্তাহ আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিও এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করেন। ফিন্যানশিয়াল টাইমসে লেখা এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘যদিও সাম্প্রতিক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তবে আমরা কিভাবে আবারও আলোচনার বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?’
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক স্থাপনাসহ আবাসিক এলাকায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালায়, যাতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হন।
সেই হামলার কয়েক দিন পরই তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, যা শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ১২ এপ্রিল থেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল, তবে ২২ জুন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
আলোচনায় ইরানের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে থাকা আরাঘচি বলেন, ‘সৎভাবে নতুন আলোচনায় সম্মত হওয়ার পর আমরা দেখেছি, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত দুটি দেশের হামলার মধ্য দিয়ে আমাদের সদিচ্ছার জবাব দেওয়া হয়েছে। ইরান কূটনীতিতে আগ্রহী থাকলেও নতুন করে সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
‘অত্যধিক নমনীয়’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারও আলোচনা শুরুর পক্ষে মত দেওয়ার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে গত মাসের হামলার প্রেক্ষিতে ‘অত্যধিক নমনীয়’ বলে অভিযোগ তুলেছেন।
এই সমালোচনা আসে টাকার কার্লসনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর, যেখানে পেজেশকিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করতে ইরানের ‘কোনো সমস্যা নেই’, যদি দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়।
পরে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বরাবর বিরোধিতা করে আসা কঠোরপন্থী কায়হান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, ‘আপনি কি ভুলে গেছেন, এই একই মার্কিনরা, যারা জায়নবাদীদের সঙ্গে মিলে আলোচনার সময়ক্ষেপণকে কাজে লাগিয়ে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল?’
রক্ষণশীল জাভান দৈনিকও পেজেশকিয়ানের মন্তব্যকে আক্রমণ করে বলেছে, ‘তার বক্তব্য কিছুটা বেশি নমনীয় মনে হচ্ছে।’
অন্যদিকে সংস্কারপন্থী হাম মিহান পত্রিকা পেজেশকিয়ানের ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’র প্রশংসা করেছে। তারা লিখেছে, ‘এই সাক্ষাৎকার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। দুঃখজনকভাবে, আন্তর্জাতিক ও মার্কিন গণমাধ্যমে ইরানি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে।’
ইরানি কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত এক হাজার ৬০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয় বলে দেশটি জানায়। পরে দুই দেশের মধ্যে ২৪ জুন থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।