ডুবে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস ইয়র্কটাউনের ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে সম্প্রতি এক গবেষণা দল খুঁজে পেয়েছে এক আশ্চর্য আবিষ্কার—ধ্বংসস্তূপের ভেতরে একটি পুরনো ফোর্ড গাড়ি।
মায়ামি হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) জাহাজ ওকিয়ানাস এক্সপ্লোরার গত ১৯ এপ্রিল ধ্বংসাবশেষটির স্থানের মানচিত্র তৈরির সময় এই আবিষ্কার করে। গাড়িটির নম্বরপ্লেটে আংশিকভাবে লেখা রয়েছে ‘শিপ সার্ভিস __ নেভি’, যা এর উপস্থিতি ঘিরে আরো রহস্য তৈরি করেছে।
ইউএসএস ইয়র্কটাউন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং মিডওয়ে যুদ্ধের পর ডুবে যায়।
৮০৯ ফুট দীর্ঘ এই বিমানবাহী রণতরিটি সেবাকালীন সময় দুই হাজার ২০০-এরও বেশি নৌ সেনা ও ৯০টি বিমান বহন করত।
জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে গাড়িটি দেখে এক গবেষক লাইভস্ট্রিমে বিস্ময়ে বলেছেন, ‘এটা একটা গাড়ি। এটা আসলেই একটা সম্পূর্ণ গাড়ি।’
গবেষকরা মনে করছেন, এই গাড়িটি সম্ভবত কালো রঙের ১৯৪০-৪১ সালের ফোর্ড সুপার ডিলাক্স ‘উডি’।
ক্যামেরা পরিদর্শনে গাড়িটির চাকার ঢাকনা, কাপড়ের ছাদ, চকচকে ধাতব রঙের বর্ডার, অতিরিক্ত চাকা দেখা গেছে। ‘উডি’ নামটি এসেছে এই সংস্করণের কাঠের প্যানেলিংযুক্ত গা থেকে, যা একে আলাদা করেছে।
এনওএএর এক গবেষক বলেন, গাড়ির নম্বরপ্লেটের পপরের অংশে ‘শিপ সার্ভিস’ লেখা দেখা গেছে, তবে নিচের অংশ ক্ষয়ে যাওয়ায় পড়া যাচ্ছে না। ফোর্ড সুপার ডিলাক্স সংস্করণের গাড়িটি সে সময় নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহার করা হতো।
কিন্তু গবেষকরা বলছেন, ‘উডি’ মডেলকে স্টাফ অফিসারদের ব্যবহার করতে দেখা যায়নি, তাই এটি এ জাহাজের জন্য বিশেষ কিছু হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা গাড়ি সম্পর্কে জানেন, তাদের প্রতি এটি একটি উন্মুক্ত অনুরোধ—দয়া করে এটি নিয়ে পোস্ট করুন। এতে আমাদের সাহায্য হবে।’
গবেষকরা অবাক হয়েছেন, হামলার পর জাহাজটিকে ভাসিয়ে রাখতে অন্য ভারী বস্তু ফেলে দিলেও গাড়িটি কেন রাখা হয়েছিল। হেরাল্ডকে দেওয়া একটি ই-মেইলে এনওএএ বলেছে, ইয়র্কটাউনের উদ্ধারকারী দল বিমানের পাশাপাশি বিমানবিধ্বংসী বন্দুক ফেলে দিয়েছিল ভার কমাতে, তবে এই গাড়িটি? এটি কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছিল—ক্যাপ্টেন, নাকি কোনো অ্যাডমিরালের?
আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে, যখন ইয়র্কটাউন পরিকল্পিত যুদ্ধের আগে পার্ল হারবারে ৪৮ ঘণ্টার জন্য রক্ষণাবেক্ষণে গিয়েছিল, তখন কেন গাড়িটি সরানো হয়নি?
ইউএসএস ইয়র্কটাউন ১৯৩৭ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে কোরাল সি ও মিডওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ নেয় এবং ১৯৪২ সালের জুনে ডুবে যায়।
এই অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৌ ইতিহাসে এক নতুন রহস্য যোগ করল।