English

26.5 C
Dhaka
সোমবার, আগস্ট ৪, ২০২৫
- Advertisement -

ভারতে ‘ডাইনি’ অপবাদে একই পরিবারের পাঁচজনকে পুড়িয়ে হত্যা

- Advertisements -

ভারতের বিহার রাজ্যের তেতগামা গ্রামে ‘ডাইনি’ অপবাদে গত ৬ জুলাই রাতে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা ও পুড়িয়ে মারা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে ভয়াবহ ও রোমহর্ষক এ ঘটনাটির খবর জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বেঁচে থাকা স্বজনেরা এখনও সেই বিভীষিকাময় রাতের দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি। বর্তমানে তেতগামা গ্রামের রাস্তাগুলো নীরবতায় মোড়ানো। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই পালিয়ে গেছেন, কেবল নিহত কাটো দেবীর চার ছেলে ও তাদের পরিবার ছাড়া। কোনো কোনো বাড়িতে তালা ঝুলছে, আবার কিছু বাড়ি এমনভাবে ছেড়ে যাওয়া হয়েছে যেন হঠাৎ করে চলে যেতে হয়েছে।

বিবিসি নিহতদের স্বজন, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ওই রাতের ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছে।

তেতগামা গ্রামের বাসিন্দা মানিশা দেবী (ছদ্মনাম) বলেন, জীবনের সবচেয়ে অন্ধকারময় রাত ছিল সেটি। রাত ১০টার দিকে একটি উন্মত্ত জনতা তাদের আত্মীয় বাবুলাল ওরাঁওয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। ভোর হওয়ার আগেই নিহত হন ৭১ বছর বয়সী কাটো ওরাঁও সহ পাঁচজন।

মানিশা দেবী বলেন, “আমরা দাঁড়িয়ে শুধু দেখেছি, কীভাবে তারা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। এখনও সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে।”

স্থানীয় লোকজন জানান, যাদুবিদ্যা চর্চার জেরে ওই পরিবারের সবাই অভিশপ্ত এবং ওই গ্রামে বিপদ ডেকে আনবে এই ভবিষ্যৎবাণীর ওপর ভিত্তি করে ওই পরিবারকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।

বিবিসি জানায়, বিহারের এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতে ডাইনি অপবাদে আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে—এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। তেতগামার ঘটনাটি আলাদা করে নজরে এসেছে, কারণ একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, যা একটি বিরল ঘটনা।

পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, মূল অভিযুক্ত রামদেব ওরাঁওয়ের ছেলে মৃত্যুবরণ করার পর তিনি কাটো দেবীর পরিবারকে যাদুটোনার মাধ্যমে তার ছেলেকে মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন। সেই রাতে রামদেব অসুস্থ এক আত্মীয়কে নিয়ে এসে গ্রামে এক ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক করান।

সেই ওঝা কাটো ওরাঁও ও সীতা দেবীকে ‘ডাইনি’ ঘোষণা করলে গ্রামবাসীদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। কাটো দেবীকে হুমকি দেওয়া হয়—অসুস্থ ছেলেটিকে আধা ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ না করলে তার ফল ভোগ করতে হবে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন বাবুলাল ও তার ছেলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের ওপর চড়াও হয় জনতা। সীতা দেবী গ্রামে ফিরে আসার পর তাকেও আক্রমণ করা হয়।

একমাত্র জীবিত কিশোর, যিনি ঘটনার সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন, পুলিশকে জানান—তিনি অন্ধকারে লুকিয়ে থেকে নিজের পরিবারের ওপর বর্বর নির্যাতন এবং পুড়িয়ে ফেলা দেখেছেন। এ ঘটনায় মোট ২৩ জনকে নাম করে এবং ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, হত্যার পর দেহগুলো পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে বস্তায় ভরে ট্রাক্টরে করে সরিয়ে ফেলা হয়।

যদিও জেলা প্রশাসক বলছেন, ময়নাতদন্তে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ স্পষ্ট হয়নি—তারা আগে মারা গিয়েছিলেন, না কি জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তা এখনও অনির্দিষ্ট।

ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতায় ধীরতা ও ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে মূল অভিযুক্তসহ অনেকে এখনও পলাতক।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটাই এলাকায় প্রথম এমন ‘ডাইনি হত্যা’ হামলা। তবে স্থানীয় সমাজকর্মী মীরা দেবী জানান, শিক্ষার অভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠী এখনও ওঝা-বৈদ্যর কথায় বিশ্বাসী এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রবণতা নেই।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/kqde
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন