ইন্দোনেশিয়ার একটি আগ্নেয়গিরিতে ট্রেকিং করার সময় খাড়া থেকে পড়ে জুলিয়ানা মেরিনস নামে এক ব্রাজিলিয়ান পর্বতারোহী নিহত হয়েছেন। তবে ভ্রমণের শুরুতেই তিনি তার মাকে একটি হৃদয়বিদারক বার্তা পাঠান, যা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
মেরিনস গত ২১ জুন একটি দলের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট রিনজানিতে হাইকিং করার সময় পা পিছলে গিরিখাতে পড়ে যান। কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করার আগে তিনি চার দিন ধরে আগ্নেয়গিরিতে আটকে ছিলেন।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরিনস ব্রাজিলের একজন পর্বতারোহী ও পোল ড্যান্সার। তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে এশিয়াজুড়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন তিনি ফিলিপাইন থেকে তার ভ্রমণ শুরু করেন, তখন এই পর্বতারোহী তার মাকে একটি বার্তা পাঠান। তাতে তিনি লেখেন, ‘মা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’
তিনি এটি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন। মেরিনস লেখেন, ‘আমরা যখন বিদায় জানালাম, তখন আমার মন ভেঙে যায়। আসলে, এটাই আমার চিন্তার একমাত্র কারণ যে, তোমাকে, বাবাকে অথবা আমার বোনকে হতাশ করা। তাছাড়া আমি খুব বেশি ভয় পাই না।’
তিনি তার মাকে আরও বলেছিলেন, তিনি সমস্যাকে ভয় পান না। কারণ তিনি এমন একজন নারীর কাছে বড় হয়েছেন, যিনি ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান’ করতে পারেন।
মেরিনস লেখেন, ‘আমি এমন একজন নারীর কাছে বড় হয়েছি, যিনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং যিনি তার স্বপ্নের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভয় পান না। আমিও তেমনই। আমার ভিন্ন ভিন্ন ইচ্ছা এবং স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসি এবং আমি সর্বদা সবার সমর্থন, যত্ন এবং স্নেহের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। এটাই আমাকে নির্ভীক করে তোলে।’
ইন্দোনেশীয় কর্মকর্তাদের মতে, ২৬ বছর বয়সি পর্বতারোহী জুলিয়ানা আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় ৪৯০ ফুট নিচে পিছলে পড়ে যান। সেদিন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে সাহায্যের জন্য চিৎকার শোনা যায় এবং তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন। তবে, আগ্নেয়গিরির ওপরে ঢেকে থাকা ঘন কুয়াশা এবং অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতি উদ্ধারকর্মীদের তার কাছে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, মেরিনস পড়ে গিয়ে নিচের কাদায় আটকে ছিলেন, যার ফলে দড়ি দিয়ে তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে ব্রাজিল সরকার জানিয়েছে, ৪ দিন ধরে পরিশ্রমের পর, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধাকারী দল ব্রাজিলিয়ান পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি ১২,০০০ ফুটেরও বেশি উঁচু এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। তবে গত মাসে একজন মালয়েশীয় পর্যটকসহ অনেক মানুষ এই পাহাড়ে হাইকিং করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন।