অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ২০ বছর বয়সী শার্লট সামার্স একটি বিরল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন—সন্তান প্রসবের মাত্র ১৭ ঘণ্টা আগে জানতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থা চিকিৎসাবিজ্ঞানে পরিচিত ‘ক্রিপটিক প্রেগন্যান্সি’ বা ‘গোপন গর্ভাবস্থা’ হিসেবে, যেখানে গর্ভাবস্থার লক্ষণ প্রায় অনুপস্থিত থাকে।
ডেইলি মেইলের বরাতে জানা গেছে, গত জুন মাসে শার্লট একটি সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের আগে তিনি শুধুমাত্র অনুভব করেছিলেন যে তার ওজন বেড়েছে এবং জিনসের সাইজ দুই ধাপ বড় হয়েছে। তবে সেটিকে তিনি মানসিক চাপ বা সুখী সম্পর্কের প্রভাব বলে ধরে নিয়েছিলেন।
শার্লট বলেন, ‘আমি তখনো সাইজ ৮-এর পোশাক কিনছিলাম। অবশ্য কিছুটা মোটা হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু ভেবেছিলাম সেটা চাপ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে।’ তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করছিলেন এবং নিয়মিত মাসিকও হচ্ছিল, যা গর্ভধারণ বোঝা আরও কঠিন করে তোলে।
৬ জুন গ্লুটেন সেনসিটিভিটি নিয়ে এক চিকিৎসকের কাছে গেলে, তাকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে বলা হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসক তাকে জানিয়ে দেন, তিনি গর্ভবতী। তখনই শার্লট জানতে পারেন তিনি গর্ভাবস্থার ৩৮ সপ্তাহ অতিক্রম করেছেন।
তড়িঘড়ি করে তাকে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় পাঠানো হয় এবং সেদিনই স্থানীয় হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, সন্তান জন্ম দিতে আর বেশি দেরি নেই।
শার্লট বলেন, ‘তারা বলল, আমি ৩৮ সপ্তাহ ৪ দিন গর্ভবতী। আমি পুরোপুরি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্র গুছিয়ে সঙ্গীকে ফোন করে বলি—চলো, এখনই হাসপাতাল যেতে হবে।’
চিকিৎসকেরা জানান, শিশুর আশপাশে কোনো অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড বা পানি ছিল না, তাই দ্রুত লেবার ইন্ডিউস করতে হতে পারে। ওই রাতেই তারা হাসপাতালে ফেরেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শার্লটের পানি ভেঙে যায়। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন।
‘আমি মাত্র সাত মিনিট পুশ করেছিলাম, তারপরই আমার ছেলে জন্ম নেয়। পুরোটা সময় যেন আমি কোনো ধন্দে ছিলাম, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,’ বলেন শার্লট।
তিনি জানান, গর্ভাবস্থার কথা জানার ১৭ ঘণ্টা ২১ মিনিট পরই তিনি সন্তান জন্ম দেন।
‘ক্রিপটিক প্রেগন্যান্সি’ এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে গর্ভাবস্থার প্রচলিত লক্ষণ যেমন পিরিয়ড বন্ধ হওয়া, পেট বড় হওয়া, কিংবা শিশুর নড়াচড়া—এসব খুব কম দেখা যায় বা অনুভব করা যায় না। ফলে গর্ভবতী নারী বুঝতেই পারেন না যে তিনি সন্তানসম্ভবা।
জার্মানির বার্লিনে ১২ মাসব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৪৭৫টি গর্ভাবস্থার মধ্যে একটি ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গোপন থাকে। এমনকি প্রতি ২,৫০০টি গর্ভাবস্থার মধ্যে একটি পূর্ণমেয়াদি সন্তান জন্ম দেওয়ার আগেও গোপন থাকে।